সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মাস থেকেই শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় চলাচলকারী টোটো গাড়িগুলিকে অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে পরিবহণ দফতর।
তবে তার আগেই টোটো বিক্রিতে বিধিনিষেধ চালু হতে চলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দোকানগুলিকে টোটো বিক্রির লাইসেন্স নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। টিসি নম্বর এবং গাড়ির চেসিস নম্বর ছাড়া টোটো বিক্রি করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় পরিবহণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে এমন টোটোই শুধু বিক্রি করা যাবে বলে পরিবহণ দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দফতরে যাবতীয় নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী মাসের গোড়া থেকেই পরিবহণ দফতরে পৃথক কাউন্টার খুলে টোটো চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে ‘অফার লেটার’ নিয়ে, পরে গাড়ির ছাড়পত্র পাওযা যাবে বলে পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্ত।
গত শুক্রবার জেলা পরিবহণ বোর্ডের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তগুলি হয়েছে। শনিবার শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে টোটো চলাচলের বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য। যানজট এড়াতে শিলিগুড়ির মূল সড়কগুলিকে বাদ রেখে টোটোর রুট ঠিক করা হয়েছে। শহরের কোথায় টোটো স্ট্যান্ড হবে এবং কত ভাড়া হবে তাও পরিবহণ কর্তৃপক্ষ স্থির করবে বলে জানানো হয়েছে। পরিবহণ দফতরের এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই টানাপড়েন শুরু হয়েছে। মূলত পুরসভার দায়িত্বে থাকা রাস্তাতেই টোটো চলাচল করবে। সে কারণে টোটোর রুট, ভাড়া এবং স্ট্যান্ড তৈরির ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় না থাকলে সুষ্ঠু ভাবে টোটো চলাচল সম্ভব কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে। মদনবাবুর দাবি, বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে রুট বা স্ট্যান্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ দিন মদনবাবু একাই সাংবাদিক বৈঠক করে সিদ্ধান্তগুলি জানিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে প্রশাসনের কোনও আধিকারিক ছিলেন না। মদনবাবু জেলা তৃণমূলের নেতা। শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ডে বামেরা ক্ষমতায় রয়েছে। সে কারণেই, পুরবোর্ডকে এড়িয়ে সরাসরি কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ। পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরসভার রাস্তায় টোটো চলবে অথচ কর্তৃপক্ষ কিছু জানবে না এটা হতে পারে না। শুধুমাত্র এক জন কাউন্সিলর মানেই পুর কর্তৃপক্ষ নন। পুরসভা একটি সাংবিধানিক সংস্থা। নির্বাচিত পুরবোর্ড রয়েছে। কমিশনার রয়েছে। তাই পুরবোর্ডের সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে।’’ অশোকবাবু জানিয়েছেন, শহরে টোটো চলাচল নিয়ে পুরসভারও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। কোথায় স্ট্যান্ড হবে তা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগাম আলোচনা না করলে সেই পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা অশোকবাবুদের।
মদনবাবু রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা যুক্তি, ‘‘রিকশাকে পুরসভা লাইসেন্স দেয় বলে রিকশা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরবোর্ডের ভূমিকা রয়েছে। টোটোর ক্ষেত্রে আইনত যাবতীয় সিদ্ধান্ত পরিবহণ দফতর নেবে। তবে প্রয়োজনে নিশ্চয়ই পুরসভার সঙ্গে আলোচনা হবে।’’ পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শহরে সর্বোচ্চ কতগুলি টোটো চলবে তার সংখ্যাও বেঁধে দেওয়া হবে।