লড়াকু: মুনমুন সরকার। নিজস্ব চিত্র
সুস্থ হয়ে ওঠা এক করোনা রোগী গাড়ির অভাবে হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেন শহরের এক মহিলা টোটোচালক। পিপিই কিট পরে বিনামূল্যে পৌঁছে দেন ওই মহিলাকে। তারপর থেকেই শিলিগুড়িবাসীর মুখে মুখে ফিরছে ওই টোটোচালকের নাম। এই পেশা কেন? কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে ছিল, জানালেন মুনমুনদেবী।
সবসময় শুনতেন মেয়েরা এটা পারে না-ওটা পারে না। এসব কোনওদিন মানেননি তিনি। বরং মনে জেদ ছিল যে সুযোগ এলেই কিছু করে দেখাবেন। বছর ছয়েক আগে অনেক ভেবে টোটো কিনে ফেলেন তিনি। তখন বলতে গেলে শহরে সব টোটোচালকই পুরুষ। মহিলারাও যে কাজটা পারেন সেটা করে দেখানোর জেদ ছিল তাঁর। তিনি জানালেন, টোটো কেনার পরে এক মাস কথা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। পরে অবশ্য সব সহজ হয়ে যায়, জানালেন তিনি। বছরদুয়েক আগে একটি জনপ্রিয় বাংলা রিয়ালিটি শো’তে ডাক পান তিনি। সেখানে তাঁকে দেখে পরে মুনমুনদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করার প্রস্তাব দেন শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা। তখন থেকেই সংস্থার সঙ্গে রয়েছেন তিনি। তবে গত মাস ছয়েক ধরে বেড়েছে কাজের গতি। এর আগে টোটোচালকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন তিনি। তবে আপাতত তাঁর ধ্যানজ্ঞান ত্রাণের কাজ। লকডাউনের সময়ে কখনও টোটো করে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন, কখনও অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে ছুটেছেন। আমপানের ত্রাণ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে তিনি গিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগণাতেও।
শক্তিগড় এবং সুকান্তপল্লির সীমানায় থাকেন সরকার পরিবার। মুনমুনদেবীর স্বামী আনন্দ সরকার নির্মাণ শিল্পে সাটারিংয়ের কাজ করেন। ছেলে শুভঙ্কর আলিপুরদুয়ারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী। মাঝে মাঝে বাড়ি আসেন তিনি। আগে বাড়িতে স্বামী, ছেলে এত দৌড়াদৌড়িতে আপত্তি জানাতেন। কিন্তু এখন বাড়ির লোকও মেনে নিয়েছেন বলে জানালেন। বলেন, ‘‘আর্থিক কারণে নয়, মানুষের জন্য কাজ করার জন্যই টোটো কিনেছি।’’ রাতে ভয় হয় না? তাঁর জবাব, ‘‘লঙ্কার গুঁড়ো থাকে।’’
যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত, সেটির কর্তা শক্তি পাল বলেন, ‘‘কেউ বিপদে রয়েছেন বলে জানালে, কোনও দিনও না করেন না উনি।’’