সাংবাদিক বৈঠকে আব্দুল করিম চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র।
ব্লক সভাপতি বদল না করলে দলের বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরুর হুঁশিয়ারি দিলেন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। তৃণমূলের ইসলামপুর ব্লক সভাপতি হয়েছেন জাকির হুসেন। তাঁর জায়গায় তৃণমূল বিধায়ক ব্লক সভাপতি হিসাবে চেয়েছিলেন নিজের বড় ছেলে মেহেতাব হোসেনকে। সেই দাবি পূরণ না হওয়াতেই আব্দুল করিম ক্ষুব্ধ।
মঙ্গলবার ইসলামপুরের বাসভবন গোলঘরে সাংবাদিক বৈঠক করে ব্লক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন আব্দুল করিম। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রিত্ব হল না। আর কিছু হল না। কোনও পরোয়া নেই আমার। কোনও চিন্তা নেই। লোকে আমাকে বলছেন, আপনাকে সংগঠনের দায়িত্ব দেবে না, যার মাধ্যমে আপনি জেতেন? আমি তৃণমূলের বিনা মদতে মানুষের ভালবাসায় এখানে জিতেছিলাম। আমি দীর্ঘ দিনের বিধায়ক। কেন আমার উপর অত্যাচার করবে?’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘মমতাদিকে বলছি, আপনি প্লিজ, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। না হলে ইসলামপুরে আন্দোলন চলবে।’’
আব্দুল করিমের অভিযোগ, তৃণমূলের ইসলামপুর ব্লকের বর্তমান সভাপতি জাকির এক জন ‘দুষ্কৃতী’। তাঁর আরও অভিযোগ, জাকির আগ্নেয়াস্ত্রধারীদের নিয়ে চলাফেরা করে। সে জন্য সকলে তাঁকে ভয় পান বলেও জানিয়েছেন আব্দুল করিম। ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়কের দাবি, তাঁর বড় ছেলেকে ব্লক সভাপতি করার জন্য তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও চিঠি লিখেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আরও ভোটে জিততাম। আমি হিংসা করিনি। বুথ দখল করিনি। সাধারণ মানুষ আমাকে জিতিয়েছেন। মমতা’দি আমাকে করিম’দা বলেন। কিন্তু আমাকে সম্মান দিচ্ছেন না কেন? ওঁরা আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁদের হাতেই সংগঠনের ভার দিচ্ছেন।’’
তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ নিয়ে, দলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি কানহাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘কলকাতার বৈঠকে ব্লক সভাপতি হিসাবে কামালউদ্দিনের নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু উনি সুজালি এলাকার। তখন আমি আপত্তি করেছিলাম। আমি তখন জাকির হুসেনের নাম প্রস্তাব করি। এর পর দলীয় নেতৃত্বে আরও সমীক্ষা করেন। সেই হিসাবেই জাকিরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। জাকির এখানে কোনও সন্ত্রাস করেছে বলে জানা নেই। উনি কী করে জানেন জানি না।’’
যাঁকে নিয়ে আব্দুল করিমের এই অভিযোগ সেই জাকির এ বার দ্বিতীয় বার ব্লক সভাপতি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। ইসলামপুরের আয়তন খুব ছোট। সকলে সকলকে চেনেন। কেউ কাউকে গালিগালাজ করে যদি সন্তুষ্ট হন তা হলে কিছু করার নেই। দল আগেই ঘোষণা করেছিল, সব দিক তদন্ত করেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমাকে দল দায়িত্ব দিয়েছে সব দিক বিচার করে। প্রতিটা নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক উন্নতি হয়েছে। আগামী দিনেও হবে। ব্যক্তিগত ভাবে কারও কোনও এলাকা নেই। যা আছে দলের আছে।’’
ঘটনাচক্রে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে এই আব্দুল করিমকেই প্রশাসনিক বৈঠকে ধমক দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। রায়গঞ্জে প্রশাসনিক বৈঠকে পৃথক জেলা চেয়ে বসেন ইসলামপুরের বিধায়ক। সেই সময় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী ধমক দেন ওই আব্দুল করিমকে।