—নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্র-রাজ্যের রাজনীতিতে তৃণমূল এবং বিজেপি-র পরস্পরের বিরোধী হলেও মালদহের কালিয়াচক ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে দেখা গেল উল্টো চিত্র। বিজেপি-র সঙ্গে জোট করে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে অপসারণ করলেন শাসকদলেরই সদস্যরা।
মঙ্গলবার পঞ্চায়েত সমিতির তলবি সভায় ২২ জন সদস্যের মধ্যে অনাস্থাকারী ১৪ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি পক্ষের কোনও সদস্য সভায় উপস্থিত হননি। কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের বিডিও রামল সিংহ বিরদী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সভাপতির বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব ডাক দেয়। তলবি সভায় ১৪-০ ভোটে সভাপতি টিঙ্কু রহমান বিশ্বাস অপসারিত হলেন।’’
২২ আসনবিশিষ্ট ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল ১৩, বিজেপি-র ৫, কংগ্রেসের ২, সিপিএমের এবং সিপিআইয়ের দখলে ছিল ১টি করে আসন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন তৃণমূলের টিঙ্কু রহমান বিশ্বাস। কিন্তু সভাপতির শাসনকালের মেয়াদ দু’বছর পূর্ণ হতেই পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলে কোন্দল বাড়তে থাকে বলে দাবি। টিঙ্কু-বিরোধী হয়ে ওঠেন তৃণমূলের ১৩ জনের মধ্যে সাত সদস্য। সভাপতির কাজকর্মে অসন্তুষ্ট বিজেপি-র পাঁচ সদস্যও বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্যদের সঙ্গে হাত মেলান বলে সূত্রের খবর।
এই আবহে বিধানসভা নির্বাচন চলে এলে বিধানসভার আসনের জন্য চেষ্টা চালাতে থাকেন টিঙ্কু। তবে মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে সাবিনা ইয়াসমিনের নাম ঘোষণা করা হয়। অনেকের দাবি, সাবিনাকে মেনে নিতে পারেনি টিঙ্কু। অভিযোগ, সাবিনার বিরোধিতা করে ভোটের সময় প্রচার করেন তিনি। ভোটের প্রাক্-মুহূর্তে কোটি কোটি টাকার টেন্ডারে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে টিঙ্কুর বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পাশাপাশি ব্লক তৃণমূল কমিটি রেজোলিশন নিয়ে তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কারও করে। সেই রেজোলিশন মালদহ জেলা কমিটিতে পাঠানো হলেও জেলা বা রাজ্য কমিটি এখনও পর্যন্ত টিঙ্কুর বহিষ্কারকে অনুমোদন দেয়নি। টিঙ্কুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার বিষয়টিও সমর্থন করেনি জেলা তৃণমূল। এ দিকে ভোটে জিতে রাজ্যের সেচ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হন সাবিনা। অভিযোগ, এর পরই সাবিনা-পন্থীরা টিঙ্কুকে সভাপতির আসন থেকে অপসারণের চেষ্টা শুরু করেন।
অনাস্থাকারীদের পক্ষ থেকে টিঙ্কুকে অপসারণের জন্য ব্লক প্রশাসনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আমিনুর আলম। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৪ অগস্ট তলবি সভার দিন ঘোষণা করেন বিডিও। বিডিও-র এই নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ আনার জন্য উচ্চ আদালতে যান টিঙ্কু। কিন্তু ১৯ অগস্ট সভাপতির আবেদনকে গ্রাহ্য করেনি আদালত। আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দেয়, ২৪ অগস্ট কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকে তলবি ডাকার। পঞ্চায়েত আইন মেনে মঙ্গলবার ছিল সভাপতির আস্থা ভোট।
অনাস্থাকারী সদস্য তথা ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আমিনুর আলমের দাবি, ‘‘ ব্লক সভাপতি নির্বাচনে সাবিনা ইয়াসমিন বিরোধিতা করেছেন। গোপনে কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেছিলেন। এ ছাড়াও পঞ্চায়েত সমিতিতে একাধিক টেন্ডার সংক্রান্ত কাজও কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যদের না জানিয়ে করছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর অপসারণের চেষ্টা করছিলাম। সাবিনা ইয়াসমিন তৃণমূলে আসার পরেও যে ভাবে তাঁর বিরোধিতায় নেমে পড়েছিলেন তাতে এ দিনের আস্থা ভোটে সভাপতির অপসারণে কার্যত তৃণমূলের জয় হল।’’ অপসারিত টিঙ্কুর পাল্টা দাবি, ‘‘মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের কিছু অনুগামী বিজেপি-কে সঙ্গে নিয়ে পার্টির গাইডলাইন অমান্য করে আমাকে অপসারণ করল। সভাপতি হিসাবে আমি কোনও দলবিরোধী কাজ করিনি। বিধানসভা ভোটে আমার এলাকার ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই তা বোঝা যাবে।’’ এ নিয়ে সাবিনা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির অনাস্থা বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের বিষয়। সমিতির বেশির ভাগ সদস্য সরকারি আইন মেনেই এ কাজ করেছেন।’’