দলীয় কর্মীদের সঙ্গে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। মঙ্গলবার ভোটগণনা কেন্দ্রের কিছুটা দূরে, সাহাপাড়ার এক দলীয় কর্মীর বাড়িতেই দিনভর সময় কাটান তিনি। সকাল থেকে নজর ছিল টিভির পর্দায়। ছবি: স্বরূপ সরকার।
বিধানসভা ভোটে বিজেপির কাছে হারার পরে, শিলিগুড়ি লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভাল ফল করা কার্যত ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়ায় শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের কাছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে চারটি পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে ছিল। এ বার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটি তৃণমূল নিজেদের দখলে রেখেছে। তাতে খানিকটা স্বস্তিতে দলের সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত গৌতম। এ বার ডাবগ্রাম-২ তাঁদের হাতছাড়া হয়েছে। সেখানে জয়ী বিজেপি। অন্য দিকে, বিধানসভায় জয়ের ধারা কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি।
কিছু দিন আগে মেয়র গৌতমকে দলের তরফে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের কিছু অংশ দেখভাল এবং সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জলপাইগুড়িতে তাঁর দলের ফল ভাল হয়েছে। তবে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতই তাঁর কাছে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ ছিল। কেননা, এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার ১৪টি সংযোজিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির শিখা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শেষ বিধানসভায় তাঁকে ২৭ হাজার ভোটে হারতে হয়েছিল। তার মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ড থেকে প্রায় ২১,৪০০ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। গত পুরভোটে ওই সমস্ত ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল ২৯,৪০০ ভোটে এগিয়ে ছিল। তাই এ বার পঞ্চায়েত ভোট ছিল চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের পরীক্ষা। তার ফল বেরোতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তৃণমূল শিবির।
এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০৬টি আসনের মধ্যে ৭৫টি পেয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি ২৯টি। সিপিএম এবং নির্দল পেয়েছে একটি করে। এক সময় বামেদের ‘খাসতালুক’ হলেও, ২০১৮ সাল থেকে এলাকা তৃণমূলের দখলে যায়। দু’দফায় সেখান থেকে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন গৌতম। তবে ডাবগ্রাম-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিক প্রার্থী নিয়ে দলে ক্ষোভ ছিল বলে দাবি জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের যুবনেতা গৌতম গোস্বামীর। ডাবগ্রাম ২ নম্বরে গত বিধানসভায় গৌতম দেব বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ে সাড়ে আট হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। মেয়রের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে ওই এলাকা থেকে তাঁরা কেমন ভোট পাচ্ছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়র গৌতম বলেন, ‘‘তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে আমরা ভাল ভাবেই জিতেছি। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে। আমরা তার পর্যালোচনা করব। বিধানসভায় ফুলবাড়ি ২ নম্বরে এগিয়ে ছিলাম। বাকি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পিছিয়ে ছিলাম। সেখানে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত ভাল ভাবে ধরে রাখতে পেরেছি।’’ এ দিন দিনভর রাজগঞ্জে দলীয় কর্মীর বাড়িতে বসে টিভিতে চোখ রেখেছিলেন তিনি। দলের নেতা-কর্মীরা খবর দিচ্ছিলেন। বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় রাজগঞ্জ বাজারে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। বিধানসভার ধারা এই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোয় তাঁরা সে ভাবে ধরে রাখতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘‘একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে আমরা জিতেছি। বাকিগুলোর ফল নিয়ে দলে আলোচনা করব।’’