জোসেফ মুন্ডার সমর্থনে সভায় অধীর চৌধুরী, মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র
জোটের সভামঞ্চেই ভাঙন ধরল তৃণমূলে। শনিবার নাগরাকাটা বিধানসভার কংগ্রেসের জোট প্রার্থী জোশেফ মুন্ডার সমর্থনে এখানকার ইউরোপিয়ান ক্লাব মাঠে জনসভা হয়। উপস্থিত ছিলেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য, সাংসদ মহম্মদ সেলিম এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সভার শেষে নাগরাকাটার ব্লক তৃণমূলের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ নেতা ধীরাজ রাই কংগ্রেসে যোগ দেন। অধীর চৌধুরী তাঁর হাতে কংগ্রেসের পতাকা তুলে দেন। অধীর এ দিন বলেন, ‘‘নাগরাকাটায় জোশেফ যে জিতছেই তা মানুষের শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট বুঝতে পারছি।’’
ধীরাজ রাই দলবদলের পর তৃণমূলের ওপর একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আমি নব্য তৃণমূলী নই। ২০০৯ থেকে তৃণমূলে রয়েছি।’’ নিজেকে ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি হিসাবে দাবি করে ধীরাজ রাই এর মন্তব্য, ‘‘দলে কোনও সম্মান নেই , নীতিহীন ভাবে কিছু লোক দল চালিয়ে যাচ্ছে বলেই নির্বাচনের আগেই দল ছাড়লাম।’’
ধীরাজবাবুকে দল বদলাতে দেখে উৎসাহ ছড়ায় জোট শিবিরেও। কংগ্রেসের এক কর্মীর কথায়, ‘‘গত কয়েক বছরে কংগ্রেস থেকেই তৃণমূলে যাওয়া দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, তৃণমূল থেকে যে ব্লক পর্যায়ের নেতা কংগ্রেসে আসতে পারে তা এ দিন চোখের সামনে দেখে আবার উৎসাহ পেলাম।’’ তবে ধীরাজবাবু নাগরাকাটা ব্লকের কোনও পদে নেই বলে পাল্টা দাবি করেন জলপাইগুড়ি তথা আলিপুরদুয়ারের তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘নাগরাকাটাতে ব্লক কার্যকরী সভাপতি বলে আমাদের কোনও পদ নেই। আর অধীরবাবু এখানে যতই দলবদল করান, ওনার নিজের জেলাতেই তো উনি জিততে পারবেন না।’’
এ দিন যে মাঠে দুই নেতা জনসভা করেন, গত ১৬ মার্চ সেই ইউরোপিয়ান ক্লাব মাঠেই জনসভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ দিনের জনসভার ভিড় মুখ্যমন্ত্রীর সভার ভিড়কে ছাপিয়ে চলে গিয়েছে বলে দাবি করেন জোটের নেতারা। সভার শেষে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। সিপিএমের ব্যাচ লাগানো মহিলা কর্মীরাও অধীরের সঙ্গে সেলফি তোলার আবদার জুড়ে দেন। হাসি মুখে অনুরোধ মেটান অধীরও।
এ দিন প্রথমে বক্তৃতা দেন মহম্মদ সেলিম। সেলিম বলেন, ‘‘আমার নামে নির্বাচন কমিশনে ওরা অভিযোগ করে। কিন্তু চোরকে চোর বলব না তো কাকে বলব। আর আমি তো শুধু বলছি না, বাংলার মানুষ ওদের চোর বলছে।’’ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে লুঠের প্রতিযোগিতা চলছে বলেও অভিযোগ করেন মহম্মদ সেলিম।
এ দিন অধীর বলেন, ‘‘২০১৩ তে কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকতেই খাদ্য সুরক্ষা রূপায়ন করে ফেলেছিল। কিন্তু সব রাজ্য তা রূপায়ণ করলেও তৃণমূল এ রাজ্যে তা করে নি। এবারে ২০১৬তে এসে ভোটের চমক দিতে খাদ্য সুরক্ষার নাম বদলে খাদ্যসাথী করে তা রূপায়ণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ সবই বুঝতে পারে।’’