যুযুধান: জলপাইগুড়ির দুই তৃণমূল নেতা মোহন বসু (বাঁদিকে) এবং বিকাশ মালাকার (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র
শাসক দলের দুই নেতার কাদা ছোড়াছুড়ির জেরে অস্বস্তিতে দল।
জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল টাউন ব্লক প্রেসিডেন্ট মোহন বসু দলের শ্রমিক নেতা বিকাশ মালাকারকে ‘তোলাবাজ’ বলে মন্তব্য করেছে এই দাবি করে বিক্ষোভ, বন্ধ চলল দিনভর। পুড়ল পুরপ্রধানের কুশপুতুল।
ঘটনার সূত্রপাত জলপাইগুড়ি শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বউবাজার এলাকার একটি অর্ধসমাপ্ত মার্কেট কমপ্লেক্স নিয়ে। তৃণমূল পরিচালিত জলপাইগুড়ি পুরসভার পৌরপ্রধান মোহন বসুর বিরুদ্ধে উদাসনীতার অভিযোগ করেন তৃণমূল শ্রমিক নেতা বিকাশ মালাকার। তাঁর অভিযোগ ১৩ বছর ধরে অর্ধসমাপ্ত পড়ে আছে ওই মার্কেট কমপ্লেক্স। এসজেডিএ কাজ অর্ধসমাপ্ত রেখে গিয়েছে। এসজেডিএ-র নতুন বোর্ডের কাছেও চেয়ারম্যান এই নিয়ে তদ্বির করেননি বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে মদ, গাঁজা, জুয়া, মধুচক্রের মতো অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছে ওই জায়গা। কিছুদিন আগে আপত্তিকর অবস্থায় এক যুগলকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বিকাশ মালাকার অভিযোগ জানিয়েছিলেন, ওখানকার দু’শোরও বেশি মাছ, মাংস, আনাজ ব্যবসায়ীদের কাছ পুরসভা টাকা নেয়, অথচ তাদের কোনও পরিষেবা দেয় না। জঞ্জাল সাফাই বা শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। একই অভিযোগ জানিয়েছেন ভজন সাহা, বাপি দাসদের মতো ব্যবসায়ীরাও।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পুরপ্রধান মোহন বসুর অভিযোগ, ‘‘বিকাশ মালাকার ওখানকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘তোলা’ তোলে। তার বড়বড় কথা বলার অধিকার নেই।’’
এই বক্তব্যের জেরেই ঘোরালো হয় পরিস্থিতি। বিকাশ মালাকার আইএনটিটিইউসি নেতা। বউবাজার ব্যবসায়ী কমিটিরও সভাপতি। অটো, টোটো, বাসের চালক এবং শ্রমিক ইউনিয়নে দাপট রয়েছে তাঁর। মঙ্গলবার সব দোকানপাট বন্ধ করে দেন বউবাজারের ব্যবসায়ীরা। বাস, অটো, টোটো চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কাঠের ব্রিজে এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ পথ অবরোধ করেন গাড়ি চালকরা। বউবাজার ব্যবসায়ী কমিটি মোহনবাবুর কুশপুতুল পোড়ায়।
শুধু জলপাইগুড়ি শহর নয়, ডুয়ার্সের বানারহাট, চামুর্চিতেও বিক্ষোভ দেখান অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। দুলাল চক্রবর্তী নামে এক গাড়ি চালক জানিয়েছেন, উন্নয়নের দাবি জানানোয় তাঁদের শ্রমিক নেতা বিকাশ মালাকারকে যে ভাবে অপমান করা হয়েছে তা তাঁরা মেনে নেবেন না। বিকাশ মালাকারও এ দিন পালটা মোহন বসুর দলবদল, তাঁর নৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘শহরের মানুষ জানেন আগে কে তোলা তুলতেন আর কী কী করতেন। এখন দলবদল করে সরকারি এসি গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ান বলে মানুষ সব কিছু ভুলে যায়নি।’’
তবে এ দিনও নিজের মন্তব্য থেকে সরেননি পুরপ্রধান। মোহনবাবুর বক্তব্য, ‘‘তোলাবাজকে তোলাবাজ বলেছি। কোনও তোলাবাজকে প্রশ্রয় দেবে না জলপাইগুড়ি পুরসভা।’’
এ দিকে এই দুই নেতার এই কাদা ছোড়াছুড়ি নিয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব।
এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কাজিয়া আর প্রকট হল বলে দাবি বিরোধী শিবিরের। বিজেপির জেলা সম্পাদক বাপি গোস্বামীর কটাক্ষ, ‘‘তোলাবাজিতে কেউ কারও থেকে কম যায় না। একেই বলে শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি।’’
মোহনবাবু টাউন ব্লক সভাপতিও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এই ভাবে টাউন ব্লক সভাপতির কুশপুতুল পোড়ানো দলবিরোধী কাজ। ঘটনা সবটা জেনে নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ করবে দল।’’