তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সভাপতি মৃণাল সরকার (মাঝখানে)। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতে গোঁজ কাঁটা থেকে মুক্ত হতে এ বার দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিল দক্ষিণ দিনাজপুর তৃণমূল। রবিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে ১৯ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সভাপতি মৃণাল সরকার। কিছু দিন আগে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী করানোর অভিযোগ তুলে কুশমন্ডি বিধানসভার বিধায়ক রেখা রায়ের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। বিধায়কের স্বামীর বিরুদ্ধে যে মহিলা কর্মী মূলত অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকেই দল থেকে ‘বহিষ্কার’ করেছে তৃণমূল।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দলবিরোধী কাজ করার অভিযোগে দলের সদস্যপদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের ১৯ জন তৃণমূল নেতাকে। এঁদের মধ্যে শুধুমাত্র গঙ্গারামপুর ব্লকেই রয়েছেন ছয় নেতা। কুমারগঞ্জ ব্লকে রয়েছেন পাঁচ নেতা। বংশীহারী ব্লকে রয়েছেন তিন জন। হিলি ব্লকে রয়েছেন দুই নেতা। এ ছাড়া তপন এবং কুশমন্ডি ব্লক থেকেও এক জন করে নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূল সভাপতি। মৃণালের বক্তব্য, দলের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা অগ্রাহ্য করেছেন ওই নেতারা। এঁদের মধ্যে এমন নেতাও রয়েছেন যাঁরা পঞ্চায়েত সমিতি বা পঞ্চায়েতস্তরের দায়িত্বে ছিলেন। মৃণালের দাবি, ওই নেতাদের বহিষ্কার করা হলেও দলের কোনও ক্ষতি হবে না। দলীয় প্রতীক ছাড়া কোনও নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি।
হরিরামপুরের সদ্য তৃণমূল নেতা সরফারাজ আলি দলীয় প্রতীক না পেয়ে এ বার কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে জেলা পরিষদে লড়ছেন। অন্য দিকে, হরিরামপুরের আর এক নেতা নকুল সরকারও দলবিরোধী কাজের জন্য বহিঃষ্কৃত হয়েছেন। গঙ্গারামপুরের মহিদুর মিয়া, হাফিজা বিবি, আব্দুল লতিফ মিয়া শরিফউদ্দিন সরকারের মতো এলাকার একাধিক নেতা রয়েছেন, যাঁরা পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন পদে ছিলেন।
কুশমন্ডির বিধায়কের স্বামী নকুল রায়ের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে প্রার্থী করার অভিযোগ তুলেছিলেন নার্গিস বেগম নামে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী। এ নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে মহিলা কর্মীরা বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় অভিযোগকারিণী নার্গিসকেই দল থেকে ‘বহিষ্কার’ করেছে তৃণমূল। রবিবার গঙ্গারামপুরে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। এই ঘটনা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল এমন একটি দল যার নিচুতলার কর্মীদের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। দলের কোনও নির্দেশই তারা মানে না। কারণ এই দলে সকলেই নেতা। পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ এই দলকে প্রত্যাখ্যান করবে।’’ বিজেপির কটাক্ষ শুনে গত বিধানসভা ভোটের সময় দলীয় প্রার্থী নিয়ে মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির দফতরে গেরুয়াশিবিরের কর্মীদের লাগাতার বিক্ষোভের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল নেতারা।