পুরসভা অভিযানের শ্বেতপত্র প্রকাশে গৌতম দেব। ছবি: নিজস্ব চিত্র
শিলিগুড়ি পুরবোর্ড দখলে আনতে এ বার বাম এবং অ-বাম সমস্ত জনপ্রতিনিধিকে তাঁদের সঙ্গে আসার আহ্বান জানালেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব।
মঙ্গলবার মেয়রের পদত্যাগ দাবি করে শিলিগুড়ি পুরসভা লাগোয়া রাস্তায় মঞ্চ বেঁধে অবস্থান বিক্ষোভ করে তৃণমূল। তার জেরে বেলা ১১ টা থেকে তিন ঘণ্টা ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সওয়া ১২ টা নাগাদ পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব সেখানে যান। শিলিগুড়ি পুরসভাকে বর্তমান সরকার আর্থিক সহায়তা করছে না বলে মেয়র বারবার মিথ্যে দাবি করেন অভিযোগ করে দলের তরফে এ দিন একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। সেখানেই পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘সিপিএম দেহত্যাগের আগে পদত্যাগ করে না। আমরা প্রতীকী পদত্যাগ দাবি করছি। জনমতের চাপে অনেক স্বৈরাচারী সরকার ভেঙে গিয়েছে। যারা বোর্ডকে সমর্থন করছেন, বাম, অবাম সকল জনপ্রতিনিধিদের সৎ বুদ্ধি, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার কাছে আবেদন এই ব্যর্থ, বন্ধ্যা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।’’ কংগ্রেসের কাছে আবেদন তাঁর আবেদন, ‘‘সুস্থ, গতিশীল পুরবোর্ড গড়তে তারা আমাদের সঙ্গে এলে স্বাগত।’’
তৃণমূলের পুরসভা অভিযান নিয়ে মন্ত্রী গৌতম দেব’কে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘বোর্ড দখল করতে ওঁদের ২০২০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওঁরা না কি একটি বই বার করে পুরসভাকে ৭১১ কোটি টাকা দিয়েছে বলছে। ২০১১ সাল থেকে হিসাব দেখানো হচ্ছে। তখন ওঁরাও বোর্ডের সহযোগী ছিল। আমরা তো গত বছর ক্ষমতায় এসেছি। মন্ত্রী অসত্য কথা বলছেন।’’
কংগ্রেস কাউন্সিলর সীমা সাহা বললেন, ‘‘অতীতে তৃণমূলের সঙ্গে গিয়ে কতটা সমস্যা হয়েছিল তা ভুলিনি। তবে ভেবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই মতো চলব।’’ পুরসভার তরফে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সরব হন কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা ৩ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান সুজয় ঘটক। বরো চেয়ারম্যানের পদ থেকেও তিনি ইস্তাফা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। তাতে উৎসাহী তৃণমূল শিবির। তবে কংগ্রেস তাদের সঙ্গে চলবে কি না তা নিয়ে ধন্দ্বে রয়েছে তৃণমূল।
৪৭ আসনের পুরসভায় ২২টি আসনে জিতে নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষের সমর্থনে বোর্ড গড়েছিল বামেরা। এক জন বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে যাওয়ায় ও অরবিন্দবাবু প্রয়াত হওয়ার পর ২২ জনকে নিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠাতা হারায় বামেরা। তৃণমূলের ১৮ জন কাউন্সিলর রয়েছে। কংগ্রেসের ৪ এবং বিজেপি’র দুই কাউন্সিলর রয়েছেন।
কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করতে তৃণমূল অনাস্থা আনবে কী? পর্যটন মন্ত্রী জানান, প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকায় তারা এখনই অনাস্থার কথা ভাবছেন না। কেন না তাতে কোনও ফল না হলে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে আর অনাস্থা আনা যাবে না। কংগ্রেস তাদের সঙ্গে রয়েছে কি না সামনের পুর বাজেটেই তা স্পষ্ট হবে বলে তিনি জানান।
এ দিন পর্যটনমন্ত্রী আট পাতার বই প্রকাশ করে পুরসভাকে রাজ্যের পুর দফতর থেকে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। যার মধ্যে গত কাল চতুর্দশ অর্থ কমিশনের ১০ কোটি টাকাও বরাদ্দ রয়েছে। তা ছাড়া গত পাঁচ বছরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে শিলিগুড়ির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ৩৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন।
মেয়র জানান, সরকারি হিসাব মত রাজ্য সরকারের কাছে পুরসভার প্রাপ্য বকেয়া ১৯৬ কোটি টাকা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের অভিযোগ, ‘‘অভিযানের নামে পুরসভা লাগোয়া সমস্ত এলাকা পুলিশ দিয়ে বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছে তৃণমূল।’’