দলের পরামর্শই সার, ভুতু বিতর্কেই

কখনও মামলায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। কখনও টাকা নয়ছয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তার উপরে এ বার দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে ব্যবসায়ীদের উপরে হামলা! সব মিলিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা ওরফে ভুতু-র ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০১
Share:

কখনও মামলায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। কখনও টাকা নয়ছয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তার উপরে এ বার দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে ব্যবসায়ীদের উপরে হামলা! সব মিলিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা ওরফে ভুতু-র ।

Advertisement

এবং এই ‘অসংযত’ আচরণের জন্য জেরে ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা নেতাদের একাংশও তা নিয়ে প্রদেশ দফতরের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কিন্তু, প্রদেশ নেতাদের কয়েকজন জানান, তাঁরা নানা সময়ে রঞ্জনকে বিতর্ক থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিলেও কাজের কাজ হয়নি। দল সূত্রের খবর, তাই দলের প্রথম সারির নেতাদের কয়েকজন ঘোঘোমালিতে মারধর, রক্তারক্তির অভিযোগে আইন মেনে মামলা রুজুর পক্ষেই সায় দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, বারবার এমনটা চলতে থাকলে দলের ভাবমূর্তিরই ক্ষতি হবে। এতদসত্ত্বেও তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় বৃহত্তর শিলিগুড়ি ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে শহর জুড়ে বাজার বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

রঞ্জনবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ঘোঘোমালি নেতাজি বাজার নিয়ে অভিযোগ এবং অতীতের অভিযোগের বিষয়গুলি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘সবই মিথ্যে। আমি কিছুই বলব না।’’

Advertisement

রঞ্জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ধারা দীর্ঘ। অতীতেও রঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে নানা সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে শান্তিনগরে মাছ বাজার তৈরির জন্য এলাকার ২৭ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পুরসভার নাম করে। বাজার হয়নিয় পুরসভাও জানিয়ে দিয়েছি ল গোটা ব্যাপারটাই বেআইনি। পুরসভার তরফেও তৎকালীন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার নাম করে অন্যায় ভাবে ওই কাজ করা হয়েছিল। আমরা যথাস্থানে জানিয়েছিলাম।’’

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

বাজার তৈরির জন্য এলাকায় নদীর ধারে যেখানে তারা ব্যবসা করতেন সেখান থেকে অন্যত্র যেতে হয়েছিল। এখনও বাজারের ব্যবসায়ীদের সেই সমস্যা রয়েই গিয়েছে বলে জানান কংগ্রেস নেতা শম্পা দাস। শান্তিনগর এলাকায় তাঁর জমিতেই ওই মাছ ব্যবসায়ীরা এখনও কারবার করছেন। তিনি অভিযোগ, ‘‘পুরসভার নাম করে ব্যবসায়ীদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তোলা হয়েছিল। পুলিশের কাছে অভিয়োগও হয়। তার পরেও অবশ্য অভিযোগে ইতি ঘটেনি।

বারবার ‘সতর্ক’ করা হলেও তাতে কাজ হয়নি বলে জানাচ্ছেন দলের একাংশ কর্মীই। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জীবন মণ্ডলের অভিযোগ, এ বছর কালী পুজোর সময় তার কাছে রঞ্জনবাবু এবং তার লোকেরা পুজোর চাঁদা বাবদ ৫০ হাজার টাকা চান। টাকা না দিলে পারলে তার বাড়িতে চড়াও রঞ্জনবাবু এবং তার দলবল। রঞ্জনবাবু গেটে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দেন। সেই মতো তাঁর লোকেরা ঘরে ঢুকে তাঁকে মারধর করে। তাঁর মা সত্তরোর্ধ রুক্মিণীদেবীকে অভিযুক্তরা পেটে লাথিও মারে। তাঁর পাঁজর ভেঙে গিয়েছিল। অভিযুক্তরা সঞ্জীবনবাবুর স্ত্রীর শাড়ি টেনে ছিঁড়ে দিয়েছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও রঞ্জনবাবু এবং তার দলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। একাংশ কর্মীর দাবি, ‘‘ভুতুদার নাম এ সব ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় দলের নাম খারাপ হচ্ছে।’’

সঞ্জীবনবাবুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন অল ইন্ডিয়া নমশূদ্র বিকাশ পরিষদ। সংগঠনের তরফে মঙ্গলবার শহরে মিছিল করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক মুকুল চন্দ্র বৈরাগ্যের অভিযোগ, ‘‘রঞ্জনবাবু এবং তাঁর লোকজন ওই ঘটনায় যুক্ত। আমরা এডিসিপি’কে বিস্তারিত জানিয়েছি। এতে ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে রঞ্জনবাবুর নামেও আমরা পুলিশে অভিযোগ জানাব।’’ ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য শ্যামল সাহা বলেন, ‘‘রঞ্জনবাবুর নামে অভিযোগের বন্যা বইছে। তবুও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না তা সকলেই বুঝতে পারছেন।’’

তবে রঞ্জনবাবু ও তাঁর অনুগামীরা তা মানতে নারাজ। এমন পরিস্থিতেও রঞ্জনবাবুর অনুগামীদের দাবি, ‘‘ভুতুদার জনপ্রিয়তা দেখেই প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো আমাদের দাদার নামে নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement