উদয়নকে বিঁধে প্রচার তৃণমূল-বিজেপির

উদয়ন গুহকে সামনে রেখেই কোচবিহারে লড়াইয়ে নেমেছে বামেরা। আর তাঁকেই লক্ষ্য করে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিরোধীরাও। তৃণমূলের থেকে পাল্টা প্রচার চালিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘উদয়ন পদলোভী’। বিরোধীদের অনেকেরই অভিযোগ, তাই প্রশাসনিক থেকে দলীয় সব পদ নিজের পকেটেই রাখতে চান তিনি। সে কারণেই পুরসভা নির্বাচনেও নিজে প্রার্থী হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২২
Share:

উদয়ন গুহকে সামনে রেখেই কোচবিহারে লড়াইয়ে নেমেছে বামেরা। আর তাঁকেই লক্ষ্য করে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিরোধীরাও।

Advertisement

তৃণমূলের থেকে পাল্টা প্রচার চালিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘উদয়ন পদলোভী’। বিরোধীদের অনেকেরই অভিযোগ, তাই প্রশাসনিক থেকে দলীয় সব পদ নিজের পকেটেই রাখতে চান তিনি। সে কারণেই পুরসভা নির্বাচনেও নিজে প্রার্থী হয়েছেন।

উদয়নবাবু দিনহাটার বিধায়ক। তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্যও। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য পদেও দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন তিনি। এতগুলি পদের দায়িত্ব সামলেও তিনি কেন পুরসভার চেয়ারম্যান হতে চাইছেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশও। ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরের সেই অসন্তোষকে উস্কে দিতে বিরোধী দলগুলিও প্রশ্ন তুলেছে, চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য দলে কী আর কেউ ছিল না?

Advertisement

উদয়নবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও প্রচারে আনতে শুরু করেছে তৃণমূল-বিজেপি। বিজেপি-র অভিযোগ, যে ভাবেই হোক পদ আঁকড়ে থাকতে থাকতে চাওয়ার মানসিকতাতেই উদয়নবাবু বিধায়ক হয়েও পুরভোটে দাঁড়িয়েছেন।

উদয়নবাবু অবশ্য পাল্টা দাবি করেন, ‘‘যে দলের সর্বত্র দুর্নীতি, সেই দলের নেতাদের মুখে দুর্নীতির অভিযোগ মানায় না। আমি যদি দুর্নীতি করে থাকি তা হলে চার বছরের তৃণমূল সরকার কী করল? আমার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন?’’ বিধায়ক হয়েও পুরভোটে দাঁড়ানোর যুক্তি হিসেবে উদয়নবাবু অবশ্য তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের উদাহরণ সামনে এনেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘বিধায়ক হয়ে পুরসভা ভোটে দাঁড়িয়ে আমি যদি লোভী হই, তাহলে এমন লোভী শাসক দলে কতজন আছেন তাঁর তালিকা প্রকাশ করা হোক। একজন মন্ত্রী পুরসভা ভোটে লড়ছেন। কলকাতার বিদায়ী মেয়র থেকে শুরু করে স্মিতা বক্সি প্রত্যেকেই বিধায়ক। তা হলে তাঁরাও কি লোভী?’’

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, বাম আমলে একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন উদয়নবাবু। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘গম বীজ কেলেঙ্কারি, সার কারখানা, তন্তুবায় সমিতি সহ নানা দুর্নীতি করে বহু টাকার মালিক হয়েছেন উদয়নবাবু। তিনি পদলোভী বলেই পুরসভা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্যে প্রার্থী হয়েছেন। আসলে তিনি আখের গুছোতে চাইছেন। তাঁর দলে দিনহাটায় কি আর কেউ ছিল না।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মনও দাবি করেন, ‘‘উদয়নবাবু যেমন ভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে চান। তিনি বুঝতে পেরেছেন আগামী বিধানসভায় আর বিধায়ক থাকবেন না। সে জন্যই পুরসভা ভোটে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাতে আর পাঁচটা বছর তো ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। এ সবই প্রচারে বলব।’’ তাঁর দাবি, বাম আমলে একাধিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। উদয়নবাবুও সেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বলে তাঁর অভিযোগ।

দিনহাটা পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হয়েছেন উদয়নবাবু। ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন সুস্মিতা সাহা। দূরশিক্ষায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ওই ওয়ার্ডে বিজেপিরও প্রার্থী হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক সুশান্ত দেব।

ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি, ‘ভারে ও ধারে’ বিরোধী প্রার্থীরা কেউই প্রয়াত কমল গুহের ছেলে উদয়নবাবুর সমতুল্য নন। কিন্তু দুই দলই ওই ওয়ার্ডে প্রচারে জোর দিয়েছে। শাসক দলের নেতা রবীন্দ্রনাথবাবু যেমন চষে বেড়াচ্ছেন ওই এলাকা। বিজেপির হেমচন্দ্র বর্মনও প্রচারে গিয়েছেন সেখানে। দুই দল প্রচার করছে, উদয়নবাবু কমল গুহের পুত্র হওয়ার সুবাদেই দলে নেতা হয়েছেন। বিধায়কও হয়েছেন। এমনকী, তৃণমূল নেতারা অনেকে এটাও অভিযোগ করছেন, দলের অন্য নেতা কর্মীদের বঞ্চিত করে পদে বসেছেন তিনি। এখনও সেই ট্রাডিশন তিনি ধরে রেখেছেন।

ফরওয়ার্ড ব্লক অবশ্য ওই বক্তব্য যুক্তিহীন বলে দাবি করছে। তাঁদের দাবি, গোটা রাজ্যে যে অরাজকতা শুরু হয়েছে, তাতে উদয়নবাবুর মতো বাম নেতৃত্ব সামনে থেকে লড়াই করবেন বলেই পুরসভায় প্রার্থী হয়েছেন। তিনি প্রার্থী হওয়ায় শাসক দল ও বিজেপি বেকায়দায় পড়ে কিছু অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ তুলছে বলে বাম নেতাদের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement