গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
দক্ষিণ কলকাতার কসবায় নিজের বাড়ির সামনে আততায়ীদের আক্রমণ থেকে কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ। একদা মেয়র পারিষদ, বর্তমানে ১২ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান সুশান্তকে খুনের চেষ্টার এই ঘটনায় উত্তাল দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের অন্দরমহল। শনিবার কলকাতা পুরসভাতেও তার আঁচ পড়েছে। ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে তাঁর মেয়র পারিষদদের মন্তব্যে বোঝা গিয়েছে, দলীয় কাউন্সিলররা একমত হতে পারছেন না। সতীর্থের উপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছেন মেয়র। অন্য দিকে, কলকাতা পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েছেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার।
শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন মেয়র। সেই সময় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফিরহাদ বলেছেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের আটকানো ফিরহাদ হাকিম, সুশান্ত ঘোষেদের কাজ নয়। এটা আটকানোর কথা পুলিশের। পুলিশকে পরিষ্কার করে বলছি, এ সব আটকান। আমি কোঅর্ডিনেটর হই বা কাউন্সিলর, আমার কাজ রাস্তায় জল জমছে কেন তা দেখা। কলে জল আছে কি না, তা দেখা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার বা সুশান্তের হাতে তো আইন নেই, অস্ত্র নেই। অপরাধী ধরার কৌশলও নেই। সে সব পুলিশের কাজ। পুলিশকে বলছি, গ্রেফতার করুন। কোনও অপরাধীকে ছাড়বেন না। অন্তঃরাজ্য অপরাধীদের ধরুন।’’
তবে দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার এই ঘটনায় পুলিশি ব্যর্থতার কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় যিনি বা যাঁরা পুলিশের ব্যর্থতার কথা বলছেন, তাঁরা সঠিক কথা বলছেন না। কারণ, পুলিশ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধীদের ধরেছে এবং দ্রুতই তদন্ত করে মূলচক্রীদের দিকেও এগোচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, সুশান্তের উপর আক্রমণের চেষ্টার ঘটনার পর পুলিশ সঠিক ভাবেই তাদের কাজ করছে।’’
মেয়র পারিষদ (শিক্ষা ওতথ্যপ্রযুক্তি) সন্দীপন সাহা অবশ্য এমন আক্রমণের চেষ্টার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবে অন্য রাজ্য থেকে কলকাতায় এসে কাউন্সিলরের উপর হামলার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। কী ভাবে এক জন অপরাধী ভিন্রাজ্য থেকে এসে আমাদের সতীর্থের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করল? এই দায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরও। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কতটা ব্যর্থ, তা প্রমাণিত হল।’’
নব্বইয়ের দশকে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ থেকেই রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন সুশান্ত। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযান কর্মসূচিতে মাত্র ২০ বছর বয়সে বুকে গুলি লাগে তাঁর। ওই দিনই পুলিশের ১৩ জন কংগ্রেসের যুব কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল কলকাতার রাজপথে। বুকে গুলি লাগার ঘটনায় প্রায় দেড় মাস এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল সুশান্তকে। তার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরও কয়েক মাস সময় লেগেছিল তাঁর। ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করলে তাতে যুক্ত হন তিনি। আর ২০১০ সালে ১০৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই তৃণমূলের কাউন্সিলর হন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বার জয়ী হলে মেয়র পারিষদ পদ দেওয়া হয় তাঁকে। তবে ২০২১ সালের মহিলা আসন সংরক্ষণের কারণে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটে লড়াই করতে চলে যান তিনি। জয়ী হলেও মেয়র পারিষদের বদলে তাঁকে করা হয় বরো কমিটির চেয়ারম্যান। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর দল ছাড়ার জল্পনা তৈরি হলেও, শেয পর্যন্ত তৃণমূলেই থেকে যান তিনি। তাঁর উপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশান্তকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। এমন এক জন নেতার উপর আক্রমণের চেষ্টার ঘটনার পর পুলিশ-প্রশাসনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলররাই একমত নন।