রাস্তার পাশে দোকানে ঢুকে পড়ে এই ট্রাকটি। ছবি: গৌর আচার্য।
উত্তর দিনাজপুরে পৃথক দু’টি পথ দুর্ঘটনায় তিন কলেজ ছাত্র সহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন এক দম্পতিও।
শুক্রবার দুপুর দু’টো নাগাদ ইটাহারের তিলনা এলাকার ইটাহার-কালিয়াগঞ্জ রাজ্য সড়কে একটি মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারের একটি গাছে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই তিন কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সন্দীপ বালো(২১), নির্মল রায়(২০) ও সুব্রত সন্ন্যাসী(২২)। মালদহের ময়না এলাকার বাসিন্দা সন্দীপ ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মালদহের গাজোল থানা এলাকার বাসিন্দা নির্মল ও সুব্রত ওই কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পড়াশোনা করতেন।
এ দিন দুপুরে একটি বাইকে চেপে ইটাহার থেকে কালিয়াগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন ওই তিন ছাত্র। তবে বাইকটি কে চালাচ্ছিলেন তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। এ দিন বিকেলে ওই কলেজের টিএমসিপির নেতারা ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে মৃতদেহগুলি সনাক্ত করেন। মৃত ছাত্ররা সকলেই তাঁদের সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন দাবি করেছেন টিএমসিপির জেলা কার্যকরী সভাপতি ইন্দ্রনীল আচার্য।
তিনি জানান, কিছুদিন পর কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। মেঘনাদ সাহা কলেজের পরীক্ষার সিট পড়েছিল কালিয়াগঞ্জ কলেজে। তাই সেখানে থাকার জন্য কালিয়াগঞ্জে এ দিন ওই তিন পড়ুয়া ঘরভাড়া খুঁজতে যাচ্ছিলেন। সেইসময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
তার আগে এদিন সকাল ৬টা নাগাদ ইটাহার থানার বৈদড়া চেকপোস্ট এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও তিলনা এলাকার ইটাহার-কালিয়াগঞ্জ রাজ্য সড়কে একটি ভুট্টাবোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে কয়েকটি ঝুপড়ি দোকানে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থলে এক বৃদ্ধা সহ চারজনের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম তাহিরুদ্দিন সরকার(৪৬), নজিমুদ্দিন আহমেদ(৪৫), সফিরুদ্দিন সরকার(৪৩) ও ফুলমনি কশ্য(৭০)। তাহিরুদ্দিন, নজিমুদ্দিনও সফিরুদ্দিনের বাড়ি দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১০০ মিটার দুরে ভেন্ডাবাড়ি এলাকায়। ফুলমনিদেবী দু’কিলোমিটার দুরে গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা।
তাহিরুদ্দিন পেশায় স্থানীয় একটি মসজিদের মোয়াজ্জেম ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় জয়হাট গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি নজিমুদ্দিন ইটাহারের খেসড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সফিরুদ্দিন দিনমজুরির কাজ করতেন।
দুর্ঘটনায় গোপালনগরের বাসিন্দা জয়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুভাষ বর্মন ও তাঁর স্ত্রী জ্যোত্স্না বর্মন গুরুতর জখম হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দুর্ঘটনার পর চালক ও খালাসি ট্রাক ফেলে পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ ট্রাকটিকে আটক করে চালক ও খালাসির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।
দু’টি পথ দুর্ঘটনায় মৃত সাত জনের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে তাহিরুদ্দিন, নজিমুদ্দিন ও সফিরুদ্দিন বৈদড়া চেকপোস্ট এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। দোকানের সামনের বাসস্টপে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ফুলমনিদেবী, সুভাষবাবু ও জ্যোত্স্নাদেবী। সেইসময় ডালখোলা থেকে মালদহগামী ১২ চাকার ভুট্টাবোঝাই ওই ট্রাকটি ওভারটেক করার সময়ে একটি ট্রেলার পিছন থেকে ধাক্কা মারলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে হুড়মুড়িয়ে প্রথমে রাস্তার বাঁদিকে টিনের তৈরি ওই চায়ের দোকান সহ পাশে থাকা দু’টি মুদিখানা, একটি সেলুন ও একটি বাসনের দোকানে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে থেমে যায়।
সব ক’টি দোকান ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলেই ওই চারজনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্ধারের কাজে হাত লাগান। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ।