আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের ঘরে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। ছবি: নারায়ন দে।
উপাচার্য-রেজিস্ট্রার ‘বিরোধ’ এ বার পৌঁছল থানায়। মঙ্গলবার রাতেই কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার একটি করেছেন, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিখিলেশ রায়। অন্য দু’টির মধ্যে একটি করেছেন ‘বরখাস্ত’ হওয়া রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সফেলি এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত শিক্ষক সাবলু বর্মণ। তবে এখানেই শেষ নয়, বুধবার উপাচার্যের অফিসের তালা খোলা অবস্থায় থাকার অভিযোগ করে ফের পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার কথা জানিয়েছেন নিখিলেশ। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত ঘটনা আমি রাজ্যপাল তথা আচার্য সি ভি আনন্দ বোসকে জানিয়েছি। তাঁরই নির্দেশে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যা-যা ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে পুরোটা জানিয়েই পুলিশে অভিযোগ করেছি। পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই কাজ করা হচ্ছে।’’ তিনি এ দিন দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ‘অনিয়মের’ নথি উপাচার্যের হাতে পৌঁছেছে। সে কারণেই তাঁর অফিসের তালা খুলে নথিপত্র সরানোর চেষ্টা হতে পারে। আব্দুল কাদের সফেলি অবশ্য এই বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি। সাবলু বর্মণ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের মধ্যে বিরোধ চলছে। মঙ্গলবার রেজিস্ট্রার অফিসে এলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই। অফিস থেকে বেরোনোর পরেই আমাকে হেনস্থা করা হয়।’’ কোচবিহার জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তিনটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
১০ মে একাধিক অভিযোগে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সফেলিকে বরখাস্ত করেন উপাচার্য নিখিলেশ রায়। তা নিয়ে একটি মামলাও চলছে উচ্চ আদালতে। রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব অন্য এক শিক্ষককে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় মঙ্গলবার, প্রায় দু’মাসের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যান আব্দুল কাদের সফেলি।
উপাচার্য লিখিত ভাবে থানায় যে অভিযোগ করেছেন তাতে উল্লেখ রয়েছে, রেজিস্ট্রার তাঁর সমর্থক ও বহিরাগতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছেন। সিল ও তালা ভেঙে রেজিস্ট্রারের অফিসে ঢোকা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, উপাচার্যকে তাঁর জাতি (রাজবংশী) তুলেও অসম্মান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর নামও তিনি লিখেছেন। আব্দুল কাদের সফেলি অবশ্য পাল্টা অভিযোগে দাবি করেছেন, তিনি অফিসে পৌঁছলে উপাচার্য লোকজন নিয়ে তাঁর অফিসে ঢুকে প্রথমে ‘হুমকি’ দেন। পরে ‘হেনস্থা’ করেন। উপাচার্যের সঙ্গে আরও কয়েক জন শিক্ষকের নামও তিনি অভিযোগে লিখেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উত্তাপ’ চলে এসেছে বাইরেও। রেজিস্ট্রারের পক্ষ নিয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল প্রভাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠন। রাজবংশী সমাজের একাধিক সংগঠন উপাচার্যের হয়ে পথে নেমেছে। গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর একটি শিবিরের নেতা বংশীবদন বর্মণ বলেন, ‘‘রাজবংশী সমাজের এক জন উপাচার্যের অসম্মান আমরা মেনে নেব না। প্রয়োজনে, রাস্তায় নেমে আন্দোলন হবে।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহের মন্তব্য, ‘‘রেজিস্ট্রারকে সাসপেন্ড করলে সেটা যেমন সমগ্র সংখ্যালঘু সমাজের উপরে আঘাত হয় না, তেমনই উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও রাজবংশী সমাজের বিরুদ্ধে নয়।’’