দলের প্রার্থীর হয়ে বিধানসভা ভোটে প্রচারের ‘শাস্তি’ হিসেবে সিপিএম কর্মীর বাড়িতে পিস্তল নিয়ে চড়াও হয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।
গত শুক্রবার গভীর রাতে শিলিগুড়ির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে এমনই অভিযোগ উঠেছে। শনিবার প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সিপিএম কর্মী শ্যাম যাদব। তিনি জানান, শুক্রবার রাত একটা নাগাদ শিলিগুড়ির পকাইজোতে তাঁর বাড়িতে তৃণমূল নেতা জয় প্রকাশ সিংহ ওরফে হিম্মত হামলা চালায়। যদিও, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত।
জানা গিয়েছে, গত বছর পুরভোটে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন অভিযুক্ত। পুরভোটের পর থেকেই এলাকার সিপিএম কর্মীদের হুমকি, ভয় দেখানো শুরু হয় বলে অভিযোগ। বিধানসভা ভোটের পরে তা চরম আকার ধারণ করেছে বলে সিপিএমের দাবি।
পাল্টা অভিযোগ করেছে তৃণমূলও। দলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকারের দাবি, ‘‘সবটাই ভিত্তিহীন। ভোটে হারার ভয়ে সিপিএম আগে থেকেই রাজনৈতিক মিথ্যাচার শুরু করেছে।’’
প্রধাননগর থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘বিষয়টি কী হয়েছে তা বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এ দিকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে শনিবার থানায় স্মারকলিপি দেন ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীরা।
সিপিএম কর্মী শ্যাম যাদবের অভিযোগ, গত শুক্রবার রাতে হঠাৎই হিম্মত ও তাঁর সঙ্গীরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা মারে। শ্যাম দরজা খুলে দিলে তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। শ্যামবাবু বলেন, ‘‘আমাকে প্রথমে লাথি-ঘুঁষি মারা হয়, তারপরে পিস্তল বের করে মাথায় ঠেকায় হিম্মত। আমি কেন সিপিএম করি, বাড়াবাড়ি করলে আমার বাবা যেভাবে খুন হয়েছিল আমাকেও সেই রাস্তাতেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন তিনি।’’ ঘটনায় তিনি ও তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন।
রাতে পুলিশি নিরাপত্তা না থাকলে ফের হিম্মত ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্যামবাবু। বছর তিনেক আগে শ্যামের বাবা রাজকুমার যাদব দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন শিলিগুড়ি রেগুলেটেড মার্কেট এলাকায়। তিনিও এলাকার সক্রিয় সিপিএম কর্মী ছিলেন। ওই খুনের মামলায় এলাকা ও বাইরের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলায় অভিযুক্ত দু’জন এখনও পলাতক। সেই সময়ও অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের দিকেই। সেই প্রসঙ্গ মনে পড়তেই আজও শিউরে উঠছেন শ্যামের পরিবার।
যদিও অভিযুক্তের দাবি, তিনি রাতে নিজের বাড়িতেই ছিলেন। ওই তৃণমূল নেতা দাবি করেন, ‘‘পকাইজোতে শ্যামের বাড়ি কেন, কোথাও যাইনি। এমনকী কোনও পিস্তলও আমার কাছে নেই। এসব সিপিএমের চক্রান্ত বলেই মনে হচ্ছে।’’ অভিযোগকারী শ্যাম তাঁর ছেলের মতো বলেও দাবি করেন তিনি। অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতিও।
হুমকি বন্ধ না হলে অবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে সিপিএম। শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, তৃণমূল হারের ভয় কাঁপছে। তাই সন্ত্রাস চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ কড়া না হলে আমাদের পথে নামতে হবে। গত শুক্রবার রাতে ঠিক কী হয়েছিল তা ভালভাবে খোঁজ নিচ্ছি।’’
গত পুরভোটে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে হিম্মতকে হারিয়ে কাউন্সিলর হয়েছেন সিপিএমের মুকুল সেনগুপ্ত। মুকুলবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ নিয়ে আগামীকাল দলে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তারপর এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’