বৃষ্টি হতেই জমিতে তো চলছে ট্রাক্টর দিয়ে হাল বহানোর কাজ। বালুরঘাটের ভুশিলা গ্রামে। ছবি অমিত মোহান্ত।
গত কয়েকদিন ধরে বাজারের বাজারে অভিযান, হুঁশিয়ারি অনেক কিছুই চলছে। আনাজের দাম কমাতে হবে বলে খোদ নবান্ন থেকে নির্দেশ। বাজারে টাস্ক ফোর্স এখন যাচ্ছে। ভাল কথা। কিন্তু দাম বৃদ্ধির পিছনে সহজ অঙ্কে চোখ রাখছেন না বোধহয় কেউই। তাই পুরো ব্যাপারটি হয়ে যাচ্ছে গাছের শিকড় কেটে মাথায় জল ঢালার মতোই নিষ্ফলা।
দাম বাড়ল কেন? বিদ্যুৎ, সার, বীজের দাম বেড়েছে। সেখানে দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেল না। গত বছরের তুলনায় এ বার অনেক কম সংখ্যক কৃষক চড়া দামেই এ সবের দাম মিটিয়ে আলু ফলিয়েছেন। ফলে তুলনায় বেশি দামেই কেনা আলুর প্যাকেট হিমঘরে ঢুকেছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কর, হিমঘরের বিদ্যুতের বাণিজ্যিক কর সবই বেড়েছে। হিমঘর থেকে আলু বের করার সময়েও কৃষি বিপণন দফতরের কড়া নজরদারি নেই। ফলে হিমঘর থেকে পাইকারি বাজার, পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজার— এই দুটো পথে কতটা দাম বাড়ল সেটায় নজর নেই, পদক্ষেপও নেই। অথচ, খুচরো ব্যবসায়ী পাইকারকে, পাইকার আলু ব্যবসায়ীকে, আলু ব্যবসায়ী কৃষকদের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত।
পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা থেকে হঠাৎ এক লাফে বেড়ে ৫০ টাকা। মহারাষ্ট্র এবং পঞ্জাব থেকেই মূলত পেঁয়াজ উত্তরবঙ্গের সব জায়গায় আসে। তা যদি কোনও ভাবে একদিন পিছিয়ে যায়, তা হলে এমন দাম বাড়তে পারে। আবার অসাধু পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা এক দিনের জন্যও সামগ্রী অবৈধ ভাবে মজুত করলেও পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বেড়ে যাবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য তা করছে কিনা, সেটার নজরদারি জরুরি ছিল। বৃষ্টির অজুহাতে কাঁচালঙ্কা, ঝিঙে, শসা, টমেটো নাগালের বাইরে যেতে থাকল। ফের বলতে হয়, কৃষকের কাছ থেকে আনাজ ব্যবসায়ীরা কী দামে কিনছেন, তাঁরা খুচরো ব্যবসায়ীকে কী দামে আনাজ বিক্রি করছেন, তারও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে মাঝখানে ফড়েরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।
প্রতিটি জেলায় নিয়ন্ত্রিত বাজারের বেচাকেনায় সরকারি নজরদারি রাখা সম্ভব। কিন্তু যেখানে সেখানে বাজার বসতে দিলে সেখানকার ব্যবসায়ীদের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ আনা যায় না। তৈরি হয়ে যায় ফড়েদের লবি। তারাই সেই পাইকারি বাজারগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। কৃষক দাম পান না, অথচ তাঁদেরই হাত ঘুরে চড়া দাম হয়ে আনাজ। এ ভাবেই দাম বাড়ে। যে দাম ২০ টাকা হওয়ার ছিল, তাই ৪০ টাকা হয়। তার পর ৫ টাকা কমে। গ্রাহক শান্তি পায়, দাম কমেছে। বাড়তি দামের বোঝা বইতে হয় সাধারণ মানুষকেই।
(প্রাবন্ধিক, বালুরঘাট)