রাতে ভুরিভোজ, সকালে পগারপার চোর

তিন বছর পরে জেল থেকে দু’দিনের জন্য বাড়ি ফিরেছে ছেলে। সঙ্গে ‘অতিথি’ দুই পুলিশকর্মী। তাই রবিবার রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার দ্বীপখন্ডা অঞ্চলের সরিফাবাদ এলাকায় লিটন সরকারের বাড়িতে ভুরিভোজেরই বন্দোবস্ত হয়েছিল।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৭:৫৪
Share:

তিন বছর পরে জেল থেকে দু’দিনের জন্য বাড়ি ফিরেছে ছেলে। সঙ্গে ‘অতিথি’ দুই পুলিশকর্মী। তাই রবিবার রাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার দ্বীপখন্ডা অঞ্চলের সরিফাবাদ এলাকায় লিটন সরকারের বাড়িতে ভুরিভোজেরই বন্দোবস্ত হয়েছিল। তারপরে লিটনকে নিয়ে এক ঘরেই ঘুমোন ওই দুই রক্ষী। ভোররাতে লিটন বাথরুমে যেতে চাইলে তার সঙ্গে রক্ষীরাও যান। কিন্তু আধো আঁধারে তাঁদের ঘুমচোখ এড়িয়ে পালিয়ে যায় লিটন। রাত পর্যন্ত সে ধরা পড়েনি।

Advertisement

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামী পালিয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলার পুলিশ মহল। জেলার সমস্ত থানা এবং বিএসএফকে খবর দিয়ে লিটনের খোঁজ চলছে বলে জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন। ওই দুই কারা রক্ষী বহরমপুর থানার পুলিশকর্মী। তাঁরা বিভাগীয় তদন্তের মুখে পড়েছেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘আমরা অভিযুক্তকে দক্ষিণ দিনাজপুর পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। শুনেছি তাদের হাত থেকেই পালিয়েছে ওই অভিযুক্ত।’’ অর্ণববাবু বলেন, ‘‘গাফিলতির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

পাশের বাড়ির এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার শাস্তি হিসেবেই লিটনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় জেলা আদালত। তারপরে তাকে পাঠানো হয় বহরমপুরে। সম্প্রতি, মা অসুস্থ বলে দু’দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি পায় লিটন। পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার সকালে বহরমপুর থেকে পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে লিটনকে নিয়ে তপনে রওনা হন দুই পুলিশ কর্মী। তপনের সরিফাবাদ এলাকায় পৌঁছতে তখন রাত ৮টা বেজে যায়। প্রতিবেশিরা জানান, লিটনকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় তার হাতে দড়ি বাঁধা ছিল বলে তারা দেখেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে লিটন ছোট। ধর্ষণের ঘটনায় সাজা হওয়ার পর লিটনের সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়ে চলে যান তার স্ত্রী। তবে চার বছরের শিশুকন্যা লিটনের বাবা ও মায়ের কাছেই থাকে। তাকে কোলে তোলার জন্য লিটনের হাতের দড়ি খুলে দেওয়া হয় বলে স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঘরের ছেলেকে দেখতে পেয়ে বাড়িতে হইচই পড়ে যায়। পড়শিরা জানান, রাতের অন্ধকারে টর্চের আলোতেই বাড়ির সামনে পুকুরে জাল ফেলা হয়। পুকুর থেকে তোলা রুই মাছের ঝোল-ভাজা থেকে বাড়ির মোরগ জবাই করে মাংসের কষা, পটল পোস্ত, ডাল, চাটনির পঞ্চব্যাঞ্জন পেশ করা হয় লিটন ও ওই দুই পুলিশকর্মীকে। লিটনের বাবা আলিমুদ্দিন সরকার ও মা জাহানারা বিবি পাকা আম, মিষ্টিরও ব্যবস্থা করেছিলেন।

এলাকার পঞ্চায়েতের বাম সদস্য মজিবর রহমানের কথায়, ‘‘রাতে ভুরিভোজের পরে দুই পুলিশ কর্মী এক ঘরেই লিটনকে নিয়ে শুয়েছিলেন বলে শুনেছি। ভোর তিনটে নাগাদ বাথরুম পেয়েছে বলে জানালে বাড়ির সামনে লিটনকে নিয়ে যান এক পুলিশ কর্মী। পিছনে ছিলেন অন্য জন। রাতের ভুরিভোজের পর ঘুম কাটেনি তাঁদের। তখনই লিটন পালায়।’’

এই খবর তপন থানায় পৌঁছনোর পরে যথা সম্ভব সতর্কতা বজায় রেখে লিটনকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে তপন থানার পুলিশ। কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয় তাদের। এদিন দিন ভর অটো, ভুটভুটিতে চাপিয়ে তপনের সীমান্ত এলাকাগুলিতে দলে দলে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের তল্লাশিতে পাঠানো হলেও এখনও পর্যন্ত লিটনের হদিশ মেলেনি। জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ হেফাজত থেকে কোনও জেলবন্দি পালাতে না পারে, তারজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নজরদারি রাখা হয়। হ্যান্ডকাপ পরানো ছিল কি না জানা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement