দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্যও ভরসা প্রতিবেশী। নিজস্ব চিত্র
বছর খানেক ধরে নিরুদ্দেশ বাবা। গত সপ্তাহে অসুস্থ মায়েরও মৃত্যু হওয়ায় দিশেহারা অবস্থার মধ্যে পড়েছে দুই নাবালক ভাইবোন। বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিকাপুর মাহাতো পাড়ার ৯ বছরের সুনীতা ও ১৪ বছরের অজয় এখন রোজ এক মুঠো খাবারের জন্য পড়শিদের উপর ভরসা করে দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয়-সুনীতার নিকট আত্মীয় বলতে কেউ নেই। তাই প্রতিবেশীরা দুই অনাথ ভাইবোনের নিরাপত্তার পাশাপাশি লেখাপড়া ও ভরনপোষণে সরকারি সহায়তার দাবি করেছেন।
সুনীতা ও অজয়ের বাবা সুজিত মাহাতা ভিন্ রাজ্যে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের মেয়ে সুনীতা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে উঠে পড়া ছেড়ে দেয়।
বাসিন্দারা জানান, মাস দশেক আগে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান সুজিতবাবু। স্বামীর খোঁজ না পেয়ে সংসারের হাল ধরেন গীতাদেবী। মাঠে দিনমজুরের কাজ করে কোনও রকমে ছেলেমেয়ের মুখে খাবার জোগাড় করতেন। বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন গীতাদেবী। ৬ সেপ্টেম্বর গীতাদেবীকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার সেখানেই মারা যান তিনি।
সেই থেকে অনাথ হয়ে চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে দুই ভাইবোন। সামনে মায়ের শ্রাদ্ধ। কিন্তু তার টাকা কোথা থেকে মিলবে, জানা নেই।
তবে স্থানীয় কালিকাপুর প্রাথমিক স্কুল থেকে সুনীতা-অজয়কে কিছু চাল দেওয়া হয়। প্রতিবেশীরা কয়েক জন কিছু করে খাবার দিলে তবেই তাদের খাওয়া জুটছে। এ ভাবেই দিন দশ বারো ধরে চলছে তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা মিনতি পাহান বলেন, ‘‘ওদের বাবা নিখোঁজের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন গীতাদেবী। দিন মজুরের কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলত। এখন মায়ের শ্রাদ্ধের কাজই বা কী করে হবে তাও ঠিক নেই। প্রশাসন সাহায্য না করলে ওরা চরম বিপদে পড়বে।’’ বালুরঘাটের বিডিও অনুজ শিকদার বলেন, ‘‘বুধবার ওই দু’জনের বাড়ি যাব।’’ আত্মীয়স্বজন থাকলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে। না পেলে ছেলেমেয়ে দু’টিকে সরকারি হোমে রাখতে উদ্যোগী হবেন বলে বিডিও আশ্বাস দেন।