ভিতরে চলছে ‘স্ক্রুটিনি’। বাইরে বিভিন্ন দলের লোকজন। রাজগঞ্জ বিডিও অফিসে। ছবি: স্বরূপ সরকার
পাহাড়ে কার্যত অদৃশ্য রইল সিপিএম, কংগ্রেস। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সিপিএম পাহাড়ে প্রার্থী দেওয়া এবং আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করে লড়ার কথা বলেছিল। বাস্তবে হাতে-গোনা কয়েকটি আসনে প্রার্থী দিতে পারলেও, কোনও আঞ্চলিক দল পঞ্চায়েত ভোটে তাদের সঙ্গে নেই। আর যে কংগ্রেসকে নিয়ে সিপিএম জোটের কথা শুনিয়েছে, তাদের কার্যত পায়ের তলায় মাটিই নেই পাহাড়ে।
পাহাড়ে দার্জিলিং জেলার অধীনে দার্জিলিং-পুলবাজার, জোড়বাংলো-সুখিয়াপোখরি, রংলি-রংলিওট, কার্শিয়াং এবং মিরিক ব্লকে ৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৯৮টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৭টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে সিপিএম। পঞ্চায়েত সমিতির ১৫৬টি আসনের মধ্যে মাত্র দু’টিতে প্রার্থী দিয়েছে তারা। কালিম্পং জেলার ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮১টি আসনে এবং চারটি পঞ্চায়েত সমিতির ৭৬টি আসনের কোথাও কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম এবং কংগ্রেস। বস্তুত, কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীই নেই পাহাড়ে।
দার্জিলিং জেলায় পাহাড়েই প্রথম সিপিএম দল গড়ে ছিল। আনন্দ পাঠক, এসপি লেপচা, রত্ন বাহাদুর রাইরা ছিলেন নেতৃত্বে। দীর্ঘদিন তাঁরা পাহাড় থেকে জিতে সাংসদও ছিলেন। আশির দশক পর্যন্ত তাঁদের রমরমাই ছিল। সিপিএমের শিলিগুড়িতে দল হয়েছে পরে। গত তিন দশকে বদলে গিয়েছে পাহাড়ে সিপিএমের পরিস্থিতি।
দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘জাতিগত প্রশ্নে সিপিএমের অবস্থান আমরা পাহাড়বাসীকে বোঝাতে পারিনি। তাতে ধীরে ধীরে পিছু হঠেছি। তবে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রাথমিক ভাবে আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। পাহাড়ের রাজনীতি পঞ্চায়েত ভোটে মূলত দু’টো শিবিরে ভাগ হয়েছে। সে জায়গাটায় সমস্যা করতে চাইছি না। আমরা সুসম্পর্ক রাখছি। অল্প কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছি।’’ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, ‘‘আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে কথা এগিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হয়েছে বিজেপি আসায়। আমাদের নীতি— তৃণমূল-বিরোধী এবং বিজেপি-বিরোধী ভোট এক করা। তাই আমরা বিষয়টাতে থাকতে পারিনি।’’
পঞ্চায়েত ভোটে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা এবং তৃণমূল এক জোট। বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, জিএনএলএফ, অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি এবং বাকি আঞ্চলিক দলগুলো বিজেপির সঙ্গে জোটে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের পরিস্থিতি পাহাড়ে রীতিমতো খারাপ। অথচ, ২০০৪ সালে দার্জিলিং লোকসভা আসন থেকে জিতেছিলেন কংগ্রেসের দাওয়া নরবুলা। পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থন পেয়েছিলেন। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘আমরা অনেক ক্ষেত্রে নির্দলকে সমর্থন করছি। স্থানীয় স্তরে সমঝোতা রয়েছে। আমাদের সেই শক্তি নেই যে, সব আসনে প্রার্থী দিতে পারব।’’