রামঘাটে বন্ধ হল বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ

প্রকল্প ঘোষণার আট মাসের মাথায় রামঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। শনিবার সকাল থেকে রামঘাটের প্রস্তাবিত এলাকায় মাটি চাপা দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দিনভর পুলিশের উপস্থিতিতে নির্মাণের মালপত্রও সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০২:২৪
Share:

প্রকল্প এলাকায় মাটি ফেলার কাজ চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রকল্প ঘোষণার আট মাসের মাথায় রামঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। শনিবার সকাল থেকে রামঘাটের প্রস্তাবিত এলাকায় মাটি চাপা দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দিনভর পুলিশের উপস্থিতিতে নির্মাণের মালপত্রও সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এই প্রকল্পটি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা এলাকার অধিকারপল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু গোটা সপ্তাহ ধরে পড়ে থাকা নির্মাণ কাজ বা শ্মশান জুড়ে খুঁড়ে রাখা গর্তগুলির কী হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। এদিন সকালে ভবন নির্মাণের পিলারের জন্য খোঁড়া মাটি বোঝানো শুরু হতেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে খুশির রেশ ছড়িয়ে পড়ে।

Advertisement

অনেককেই দোকান, বাড়ি থেকে বার হয়ে এসে শ্মশানের সামনে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। প্রতিটি চায়ের দোকানে আড্ডায় দিনভর প্রকল্প বন্ধ, নাগরিক মঞ্চের আন্দোলন নিয়ে আড্ডা চলে। তবে গোলমালের আশঙ্কায় এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েনও করা হয়। তবে কোনও গোলমাল হয়নি। বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান, গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে এলাকায় বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি রাখা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। মারধর, গ্রেফতার, পুলিশের জিপে আগুন, মামলা, রাজনৈতিক টানাপড়েনের এদিন পুরোপুরি অবসান হয়ে গেল।

এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। মানুষ যখন চায়নি, তাই আর ওখানে প্রকল্প হবে না। এদিন গর্তগুলি মাটি বুঝিয়ে সব নির্মাণ কাজ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। আমরা অধিকারপল্লিতে বৈদ্যুতিক চুল্লি করব। ইতিমধ্যে ওই এলাকার মানুষ তা চান বলে গণস্বাক্ষর করে স্মারলিপিও দিয়েছেন।’’

Advertisement

আর বামেদের মেয়র পদের দাবিদার তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রামঘাট নিয়ে রাজ্য সরকার, মন্ত্রী যে ভুল করেছিলেন তা তো প্রমাণ হয়েছে। মানুষের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে কোনও কাজ যে করা যায় না, শিলিগুড়ির রামঘাট তা দেখিয়ে দিল।’’

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠান থেকেই গোলমালের সূত্রপাত্র। প্রকল্পের বিরোধিতা করায় অনুষ্ঠানে মহানন্দ মণ্ডল নামে স্থানীয় ক্লাবের এক কর্মকর্তাকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রী গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে। পাল্টা, মন্ত্রীকে হেনস্থা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হয় মহানন্দবাবুর বিরুদ্ধেও। পরবর্তীতে তিনি গ্রেফতারও হন। আবার নির্মাণ কাজ শুরু পর শ্মশানে কাঠের চুল্লিতে একটি দেহ সৎকার করাতে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারে নেয়। শিলিগুড়ি থানার আইসি-র গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের বিভাগীয় রিপোর্টে অবশ্য ঘটনার জন্য তৎকালীন আইসি বিকাশকান্তি দে বিরুদ্ধেই গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। মহানন্দবাবু ছাড়াও কংগ্রেস নেতা রাজেশ যাদব, ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ-সহ বহু বাসিন্দা গ্রেফতার হন। এলাকার তৈরি হয় নাগরিক মঞ্চ। কংগ্রেস, বিজেপি এবং বাম নেতারা মঞ্চের পাশে দাঁড়ান।

এতে ‘ঘরে বাইরে’ চাপের মুখে পড়ে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। স্থানীয় এক পরিবহণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে তৃণমূলের পার্টি অফিসও খোলা হয়। এরই মধ্যে এলাকায় শহরের একমাত্র মাদ্রাসার নির্বাচনেও তৃণমূল হেরে যায়। তৃণমূলের অন্দরেই প্রকল্পটি ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। বিষয়টি পুরমন্ত্রী ববি হাকিম ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছায়। রামঘাট শ্মশান প্রকল্প নিয়ে আর এগোনো হবে না বলে ঠিক হয়। হাইকোর্টে অবশ্য নাগরিক মঞ্চ দূষণের কথা বলে মামলা করলেও হেরে যায়। আবার শ্মশান হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বাসিন্দারা। এরই মধ্যে পুরভোটে ওই পরিবহণ ব্যবসায়ীর স্ত্রীকেই প্রার্থী করে তৃণমূল। মহানন্দ মণ্ডলও কয়েকশ অনুগামী নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দেন।

পুরভোটে রামঘাট এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি জিতেছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। দেখা যায়, ওযার্ডের ফলাফলে তৃণমূল তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এমনকি, আশেপাশের ৪, ৬, ৭, ২৫, ৩১, ৮ ওয়ার্ডগুলিও বিরোধীরা জিতেছে। শুধুমাত্র ৯ নম্বরটি তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। এর পরেই মন্ত্রী গৌতমবাবু প্রকল্প পুরোপুরি অধিকারপল্লিতে সরানোর ঘোষণা করে দেন। স্থানীয় নাগরিক মঞ্চের মুখপাত্র তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মহানন্দবাবু বলেন, ‘‘পুরোটাই এলাকার মানুষের জয়। পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাতেই মন্ত্রী, সরকারকে পুরোপুরি পিছু হঠতে হল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement