নির্বাচনী প্রচারের ময়দানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে (আরএসএস) সরাসরি নামতে দেখা যায়নি। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই সঙ্ঘের সদস্যরা এনআরসি নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে পথসভা ও শিবির করে বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় সঙ্ঘকেও বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন বিজেপির জেলা নেতাদের একাংশ। বস্তুত, গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপি তৃণমূলের থেকে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী তপন দেবসিংহ বিজেপি প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকারকে ২৪১৪ ভোটে পরাজিত করেন।
বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দামের অবশ্য দাবি, ‘‘সঙ্ঘ একটি সামাজিক সংগঠন। ওই সংগঠনের সঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচির কোনও সম্পর্ক নেই।’’
সঙ্ঘের দুই দিনাজপুরের বিভাগ কার্যবাহ বিশ্বরূপ কুণ্ডুর কথায়, সঙ্ঘের তরফে এনআরসি-র পক্ষে গত প্রায় তিন দশক ধরে বাসিন্দাদের বোঝানো হচ্ছে। বিশ্বরূপ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে এ রাজ্যে আসা হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে আসা সংখ্যালঘুদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তকমা দেওয়া হোক।’’ তবে তাঁর দাবি, কালিয়াগঞ্জে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরে সঙ্ঘের তরফে এনআরসি নিয়ে কালিয়াগঞ্জের কোনও এলাকায় শিবির বা পথসভা করা হয়নি।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দাবি, কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার সঙ্ঘের সদস্যদের একাংশ সঙ্ঘের পতাকা, ফেস্টুন ও ব্যানার ছাড়া বিজেপির নেতা ও কর্মী হিসেবে কমলবাবুর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। তাঁরা বিজেপির ব্যানারে কালিয়াগঞ্জের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পথসভা, কর্মিসভা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের এনআরসি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে এলাকায় কার্যকরী করার স্বার্থে কমলকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।
বিজেপির এক জেলা নেতারও কথায়, সঙ্ঘের সদস্যরা অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে শক্তিশালী ও উন্নয়নশীল দেশ গঠন এবং হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাসিন্দাদের উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। ফলে কালিয়াগঞ্জে দল পরাজিত হওয়ায় পরোক্ষ ভাবে হলেও সঙ্ঘও ধাক্কা খেয়েছে। বিজেপি কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রে জয়ী হলে সঙ্ঘের প্রসারের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যেত। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির নেতা ও কর্মী হিসেবে সঙ্ঘের অনেকেই কালিয়াগঞ্জে দলকে শক্তিশালী করতে নানা পরিকল্পনা করেছেন। তবে নির্মলের দাবি, সঙ্ঘের সদস্যরা বিজেপির নেতা বা কর্মী হতেই পারেন। তবে তাঁরা সঙ্ঘের হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শামিল হন না।