—প্রতীকী চিত্র।
বনকর্মী ছাড়া, ‘বহিরাগত’ কাউকে কুনকি হাতিদের কাছাকাছি ঘেঁষতে দিতে আর রাজি নয় বন দফতর। পর্যটকেরা তো বটেই, বন দফতরের কাজেও যাঁরা সহায়তা করেন, এমনকি, যে সব বনকর্মী প্রশিক্ষিত নন, তাঁদেরও কুনকি হাতিদের কাছে যেতে নিষেধ করছে দফতর।
শীঘ্রই বন দফতরের তরফে বিভিন্ন বন বিভাগে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সোমবার, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ধূপঝোড়ার পিলখানায় হাতিপুজোর আগে প্রাণী চিকিৎসক শ্বেতা মণ্ডল যখন কুনকি হাতি কিরণরাজের কাছাকাছি চলে যান, সে সময় হাতিটি শুঁড় দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ফেলে দেয়। হাতিটি হঠাৎ কেন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল তা নিয়ে চর্চা চলছে বন দফতরের অন্দরে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘কুনকি হাতির আশপাশে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। এ সব আমরা বন্ধ করে দেব। পুরো বিষয়টিই আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।’’
গরুমারা এবং জলদাপাড়া, দুই জঙ্গলেই পর্যটকদের হাতিতে চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গরুমারায় দীর্ঘদিন হাতির সওয়ারি বন্ধ থাকার পরে, চলতি মাস থেকে ফের শুরু হয়েছে। হাতির সওয়ারির আগে-পরে পর্যটকদের একাংশ হাতির সঙ্গে ‘নিজস্বী’ তুলতে কুনকি হাতিদের খুব কাছাকাছি চলে যান। পর্যটকদের একাংশ পিলখানায় গিয়েও সেখানকার লোকজনদের অনুরোধ করে হাতিদের নানা খাবার দেন। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই পরিচিতির সুবাদে অথবা কোনও কারণ ছাড়াই কুনকি হাতিদের কাছাকাছি চলে যান ‘বহিরাগতেরা’। সে সবেই আপাতত রাশ টানতে চাইছে বন দফতর।
দেশের অন্যতম এক হস্তি বিশারদের কথায়, ‘‘শুধু বেড়ি পরিয়ে রাখা হয় বলেই কুনকিদের সামনে যখন তখন গিয়ে বিরক্ত করার অধিকার আমাদের কারও নেই। ওদের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, বিরক্তি আছে। সেগুলিকে মর্যাদা দিতে হবে, না হলে কিরণরাজের মতো কাণ্ড হবে।’’
এ দিকে, গত সোমবারের পরে, কিরণরাজকে আলাদা রাখা হয়েছে। কেন কিরণরাজ হঠাৎ খেপে উঠল তা আপাতত খতিয়ে দেখছে বন দফতর। বনকর্মীদের একাংশের দাবি, কিরণরাজকে নতুন করে আদব-কায়দা শেখানো হবে। তার পরে, তাকে আবার কাজে নামানো হবে। বন দফতরের একাংশের দাবি, প্রথমে ভাবা হয়েছিল কুনকি হাতিটির ‘মস্তি’ হয়েছে।
বনকর্মীদেরই একাংশের দাবি, গত সোমবার সকাল থেকে চড়া রোদে কুনকি হাতিদের স্নান করানো হয়েছিল। এ সব প্রস্তুতির জন্য সকাল থেকে খাওয়া হয়নি কুনকিগুলির। তার পরে, ‘অকারণে’ মাহুত বা পাতাওয়ালা ছাড়া, অন্য কেউ হাতিটির কাছে চলে যাওয়ায়, সে খেপে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। পোষা হলেও, বুনোদের মেজাজ কখন কেমন থাকে তা জানা সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই বন দফতর আপাতত কড়াকড়ি করতে চলেছে।