Forest department

জঙ্গল সফরের গাড়ি নিয়ে কড়া হচ্ছে বন দফতর

সাফারি গাড়ির মালিকদের হাতে ধরানো বিধিনিষেধে জঙ্গলের ভিতরের পথে কোনও কড়া সুগন্ধি মাখা পর্যটককে নিয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, সুগন্ধিতে বন্যপ্রাণী আকৃষ্ট হতে পারে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৯:০২
Share:

নিষেধাজ্ঞা: জঙ্গলে এই দৃশ্যে আসছে কিছু নিয়ন্ত্রণ। নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গল সফরে (সাফারি) গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আসছে। এ বার সে কাজে ব্যবহৃত যাওয়া সব গাড়ির ‘স্বাস্থ্য’ রিপোর্ট চাইল বন দফতর। সে রিপোর্ট জমা না দিলে বা রিপোর্ট অনুযায়ী অযোগ্য বিবেচিত হলে, সংশ্লিষ্ট গাড়ি ‘সাফারি:র তালিকা থেকে বাতিল হবে। পাশাপাশি, আরও কিছু বিধিনিষেধ আনছে দফতর। যেমন, কড়া সুগন্ধি মেখে কোনও পর্যটক জঙ্গল সাফারিতে এলে, তাঁকে গাড়িতে তোলা যাবে না। জলদাপাড়ার জঙ্গলে সম্প্রতি একটি গন্ডার সাফারি গাড়ির দিকে তেড়ে গিয়েছিল। সে অবস্থায় চালক গাড়ি নিয়ে পালাতে গেলে, গাড়িটি পাশের নয়নজুলিতে পড়ে যায়। জলদাপাড়ার সে ঘটনার পরে, তাই এমনই একগুচ্ছ বিধিনিষেধ আরোপ করল জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণী বিভাগ। গরুমারা, চাপড়ামারি এবং মূর্তিতে ‘সাফারি’র ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ বলবৎ হচ্ছে।

Advertisement

মূল নজর দেওয়া হচ্ছে গাড়ির দিকে। হুড খোলা গাড়িগুলির স্বাস্থ্য রিপোর্টও চাইছে বন দফতর। গাড়িগুলির বেশ কয়েকটি অত্যন্ত পুরনো হয়ে গিয়েছে। সেগুলিকে বদলে ফেলতেও বলেছে দফতর। সে সব গাড়ি থেকে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। পুরনো এ সব গাড়ি কতটা সফরের পক্ষে উপযুক্ত অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জঙ্গল-পথে সফরে গেলে বন্যপ্রাণী তাড়া করতে পারে, এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। সে ক্ষেত্রে গাড়িটির গতি হঠাৎ বাড়ানো বা কমানো সম্ভব কি না, গাড়ির ইঞ্জিন মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যা কিনা— এগুলিও দুশ্চিন্তার কারণ বলে দাবি।

বন দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, সফরে ব্যবহৃত গাড়িগুলির বেশিরভাগই লড়ঝড়ে হয়ে গিয়েছে। কিছু গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও ঠিকঠাক নেই বলে দাবি। যেমন, যে মডেলের গাড়িতে সাধারণত ‘সাফারি’ হয় সেটি আশির দশকে প্রথমে তৈরি হয়েছিল। অথচ, একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের বছর ‘১৯৫০’ সাল লেখা রয়েছে বলে দাবি। সে কারণে সব গাড়ির স্বাস্থ্যের রিপোর্ট ফের চেয়েছে বন দফতর। জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণী বিভাগের বনাধিকারিক দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে প্রথম। সে কারণে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। সেগুলি যদি কেউ না মানে অথবা সাফারির গাড়ির সুস্বাস্থ্যের রিপোর্ট জমা না দেয়, তা হলে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

Advertisement

সাফারি গাড়ির মালিকদের হাতে ধরানো বিধিনিষেধে জঙ্গলের ভিতরের পথে কোনও কড়া সুগন্ধি মাখা পর্যটককে নিয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, সুগন্ধিতে বন্যপ্রাণী আকৃষ্ট হতে পারে। সাধারণত বন্যপ্রাণী আশপাশে দেখলে সাফারি গাড়িগুলি গতি কমিয়ে দেয়। যাতে পর্যটকরা ভাল ভাবে বন্যপ্রাণীদের দেখতে পারেন। দফতরের নির্দেশ, বন্যপ্রাণী দেখে গাড়ির গতি কমানো চলবে না, ছবি তুলতে কাউকে গাড়ি থেকে নামতে দেওয়া যাবে না। জঙ্গলে কোথাও গাড়ি থামাতেও বারণ করা হয়েছে।

গরুমারা, চাপরামারি এবং মূর্তি মিলিয়ে ৭৫টি গাড়ি সাফারিতে নিয়ে যায় পর্যটকদের। সাফারি গাড়ির মালিক সংগঠনের সম্পাদক সমীর দেব বলেন, “আমাদের সব গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়মিত জমা দেওয়া হয়। কিছু গাড়ি পুরনো রয়েছে। সেগুলি বদলে ফেলা নিয়ে বন দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ছাড়া, যা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সবই মেনে চলা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement