প্রতীকী ছবি।
সিএএ কথাটাই উচ্চারণ করতে জেলার নেতাদের বারণ করল বিজেপি। রূদ্ধদ্বার বৈঠকে জেলা নেতাদের কাছে বিজেপি নেতৃত্ব কবুল করলেন, বিরোধীরা (বিশেষ করে তৃণমূল) এনআরসি এবং সিএএ কথা দুটিকে নিজেদের মতো করে ‘মার্কেটিং’ করতে পেরেছে। তাদের প্রবল বিরুদ্ধ প্রচারে এনআরসি ও সিএএ নিয়ে জনমানসে ভয় জন্মেছে বলেও, মনে করছে বিজেপি। তাই বৈঠকে দলের জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং এবং শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার মণ্ডল সভাপতিদের বলেন, ‘‘এনআরসি বা সিএএ উচ্চারণ না করে শুধু বলুন, ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ দেশে আসা সব হিন্দু, খ্রিস্টান, জৈনদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’’
বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের এই পাঁচ জেলার নেতাদের ক্লাস নিয়েছে বিজেপি। জেলা সভাপতি এবং মণ্ডল সভাপতিদেরই ক্লাসে রাখা হয়েছিল। নিজেদের এলাকায় নাগরিকদের তালিকা, অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা এবং যে শরণার্থীরা এখানে রয়েছেন অথচ নাগরিকত্ব পাননি, তার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মতো জলপাইগুড়ি জেলায় কাজও শুরু হয়েছে। আপাতত বিজেপির লক্ষ্য জেলার উদ্বাস্তুপ্রবণ এলাকাগুলি। প্রথম পর্যায়ে ময়নাগুড়ি, রাজগঞ্জ ও ধূপগুড়িতে তালিকা তৈরি হবে। জেলা থেকেও নেতারা যাবেন। বিজেপি অবশ্য রেখেঢেকেই এই কাজ করতে আগ্রহী। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “সব উদ্বাস্তু, শরণার্থীদের কাছে আমরা পৌঁছব। তাঁদের আশ্বস্ত করব যে, কেন্দ্রীয় সরকার পাশে রয়েছে। এবার তাঁদের নাগরিকত্ব মিলবে।”
এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদেরই একাংশ যে ‘ভয়ে’ রয়েছেন, তা মানেন বিজেপি নেতারাও। বৃহস্পতিবার তাই বক্তৃতার শুরুতেই রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন বুথ সভাপতিদের জিজ্ঞেস করেন, “আপনাদের মনে এই আইন নিয়ে কোনও ভয় নেই তো?” বেশ কিছুক্ষণ কোনও উত্তর না পেয়ে মেনন মন্তব্য করেন, “মনে কোনও প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। নিজেরা ভয়ে থাকলে অন্যকে বোঝাতে পারবেন না কিন্তু।” বিজেপি নেতারা অবশ্য মনে করছেন, নিজের জন্য আশঙ্কা নয়, কর্মীদের এই ভয়ের পিছনে রয়েছে বিরোধীদের সিএএ-বিরোধী আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি কর্মীদের মুখেও এনআরসি বা সিএএ শুনে প্রথমেই মানুষ ঘাবড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দলের নেতৃত্বের। শিলিগুড়ির এক মণ্ডল সভাপতি বলেন, “মানুষ ভাবছে সিএএ বোধহয় সাংঘাতিক কিছু। একবার কোনও কিছু নিয়ে মনে ভয় ঢুকে গেলে তা দূর করা মুশকিল। তাই দল আমাদের বলেছে, প্রথমে সিএএ কথাটিই উচ্চারণ না করতে।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মন্তব্য, “তার মানে বিজেপি মেনে নিল, সিএএ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাই নিজেরাও সে কথা উচ্চারণ করতে দ্বিধা করছে।”