সংঘর্ষের পরে: বুধবার গোলমালের পরে বৃহস্পতিবার মাঝেরডাবরিতে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
মাঝেরডাবরি চা বাগানের প্রস্তাবিত জমিতেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর সিদ্ধান্তে অনড় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার প্রশাসনের তরফে এ কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হল। তবে বুধবারের গোলমালের জেরে আপাতত যে অনির্দিষ্ট কালের জন্য প্রকল্পের সীমানা পাঁচিল দেওয়ার কাজ বন্ধ হয়ে গেল, তা স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার সকাল হতেই ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত মেশিনপত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে এই কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থা। সংস্থার কর্তাদের সাফ কথা, এই মুহুর্তে যে পরিস্থিতি, তাতে করে প্রশাসন বললেও, কবে কাজ শুরু করা যাবে বলা মুশকিল।
মাঝেরডাবরির ঘটনায় যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের এক জনকে পুলিশ হেফাজতে ও বাকিদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মাঝেরডাবরি। এই উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটেছে অনেক দিন আগেই। গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক জমিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিল আলিপুরদুয়ার পুরসভা ও প্রশাসন। কিন্তু বারবার স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে পড়ে তাদের পিছিয়ে আসতে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মাস কয়েক আগে মাঝেরডাবরি চা বাগানের একটি জমিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বাধা এড়াতে নভেম্বর মাসের গোড়ায় নিঃশব্দে সেখানে সীমানা পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজে তিন মাসের সময়সীমা বাঁধা হলেও, প্রশাসনের কর্তারা দুই মাসের মধ্যেই সেই কাজ শেষ করতে চাইছিলেন। কিন্তু তার আগেই বুধবার পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গেটা এলাকা। পুলিশ ক্যাম্প ও শ্রমিকদের থাকার ক্যাম্প ভেঙে তছনছ করে দেওয়ার পাশাপাশি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয় এমন বিভিন্ন যন্ত্রও ভাঙচুর করা হয়।
সূত্রের খবর, বুধবারের ঘটনার পর আতঙ্কে এখানে কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা প্রায় প্রত্যেকেই চলে গিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধ হয়ে যায় কাজ। বৃহস্পতিবার নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যাবতীয় মেশিনপত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ঠিকাদারি সংস্থা।
এ দিন বিকেলে ঠিকাদার সংস্থার শীর্ষ কর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন আলিপুরদুয়ার পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমা শাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ। তার আগেই অবশ্য প্রশাসক বলেন, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই সেখানে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার পরও বুধবারের ঘটনা যথেষ্টই দুঃখজনক। মানুষকে বুঝিয়ে আমরা দ্রুত সেই কাজ ফের শুরু করব।’’
তবে এই কাজে বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার কর্তা চিন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মাটি কাটার যন্ত্র থেকে শুরু করে ট্রাক্টর সহ বিভিন্ন মেশিনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেনারেটর সহ বেশ কিছু যন্ত্র উধাও। এই অবস্থায় আমার যা ক্ষতি হয়েছে, তাতে প্রশাসন ভরসা দিলেও কবে ফের সেখানে কাজ শুরু করতে পারব, সেই ব্যাপারে এক্ষুনি কথা দিতে পারব না।’’
তবে মাঝেরডাবরি চা বাগানের প্রস্তাবিত জমিতে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর বিরোধিতায় অনড় বাসিন্দাদের একাংশ। কালকুট গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ সাংমার সাফ কথা, ‘‘ওখানে ফের প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হলে আবারও বড় ধরণের আন্দোলন হবে। এলাকাকে দূষিত করে কোনও ভাবেই এ ধরনের প্রকল্প সেখানে করতে দেওয়া হবে না।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, ‘‘বুধবারের ঘটনার জন্য বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই দায়ী। খুব শীঘ্রই ওই জমিতে কাজ শুরু হবে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা পাল্টা বলেন, ‘‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তৃণমূল নেতারা যা খুশি তাই বলতে পারেন। সত্যি ঘটনা কী, তা মানুষ জানেন।’’
বুধবারের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দিনভর ঘটনাস্থল সহ আশপাশের এলাকা থমথমে ছিল। এলাকায় রয়েছে পুলিশ পিকেট।