বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি করিডর লাগোয়া এলাকায় চোরাচালানকারীদের হামলার ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সীমান্তে নেই কাঁটাতার। অভিযোগ, সেই সুযোগে রাতের অন্ধকারে, কুয়াশার মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী ভারতের এলাকায় ঢুকে বিএসএফ শিবিরে হামলা চালাল। যা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছে বিএসএফ। শিলিগুড়ি করিডর লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার বেরুবাড়ির কাছে একটি গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার প্রায় ভোর রাতে। এই ঘটনায় আনোয়ার হক (৩৫) নামে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন এক বিএসএফ জওয়ান। আনোয়ার বাংলাদেশের পঞ্চগড় এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। সকালে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বিএসএফ। সূত্রের দাবি, ভারতে ঢুকে পাচারকারীদের হামলা চালানোর এমন ঘটনা ‘বিরল’। বিজিবি দেহটি নিয়ে গিয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ সুপার উমেশ খণ্ডবহালে বলেন, “চাণক্য সীমান্ত পোস্টে গরু পাচার রুখতে বিএসএফ জওয়ান গুলি চালান। সীমান্তের ও-পারে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থানার ভজনপুর গ্রামের বাসিন্দা।”
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি করিডর লাগোয়া এলাকায় চোরাচালানকারীদের এমন হামলার ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। শিলিগুড়ি করিডর এবং চিকেন’স নেক বরাবরই দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে সংবেদনশীল এলাকা। বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই এলাকায় বাড়তি নজরদারিতে একাধিক আধা সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছে।
অগস্টের পরে পঞ্চগড় এলাকা থেকে ভারতের ঢোকার চেষ্টাও হয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশের একাধিক নেতার ক্রমাগত ভারত-বিরোধী হুমকিও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। সেই আবহে এই হামলার ঘটনাকে খাটো করে দেখতে নারাজ গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। উল্টে, বিএসএফের উপরে হামলা করা হল কেন, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ এসেছে। সম্প্রতি বিএসএফের আইজি (উত্তরবঙ্গ) সূর্যকান্ত শর্মা দাবি করেছিলেন, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুর থেকে বাংলাদেশের বহু সংখ্যালঘু নাগরিক ভারতে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ দিন বিএসএফ দিবসে ডিজি দলজিৎ সিংহ চৌধুরীও সেই ঘটনার উল্লেখ করেছেন আলাদা ভাবে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ গরু নিয়ে দুষ্কৃতীরা চাণক্য সীমান্ত পোস্ট পেরিয়ে বাংলাদেশে যেতে গেলে বিএসএফ জওয়ানদের নজরে পড়ে যায়। বিএসএফের একটি নিরাপত্তা-ছাউনিতে দু’টি গরু আটক করা হয়। তবে দুষ্কৃতীরা পিছু হটেনি। তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ‘স্টান গ্রেনেড’ ফাটান জওয়ানেরা। দুষ্কৃতীরা না পালিয়ে পর পর তিনটি পোস্টে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ভয় দেখাতে বিএসএফ ‘পাম্প অ্যাকশন গান’ থেকে ছররা ছোড়ে। বিএসএফের অভিযোগ, পাচারকারীরা পাল্টা গুলি চালায়। এমনকি, ২৫১/১২ নম্বর পোস্টের এক জওয়ানের উপরে কুড়ি-পঁচিশ জন দুষ্কৃতী হামলা করে। ওই জওয়ানের পিঠে, হাতে হাঁসুয়ার কোপ মারা হয়। আত্মরক্ষায় জওয়ান গুলি চালানোয় দুষ্কৃতীরা পালায়। সকালে দেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।