—প্রতীকী চিত্র।
বিজ্ঞানের স্যর?
দু’জনেই অনুপস্থিত!
অঙ্কের স্যর?
অনুপস্থিত!
ইংরেজির দিদিমণি?
অনুপস্থিত!
মাধ্যমকের ফল প্রকাশের দিন স্কুলে অনুপস্থিত রইলেন এসএসসি-র বাতিল হওয়া ২০১৬ সালের নিয়োগের প্যানেলে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ বাকিদেরও মুখে মুখে ফিরল একটিই প্রশ্ন, উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হবে কী করে?
জলপাইগুড়ি জেলার একটি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান, অঙ্ক, ইংরেজি এবং ভূগোল— সব বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ২০১৬ সালে নিয়োগ হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে মূলত তাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াচ্ছেন স্কুলে। এ বছর কী হবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর কথায়, “নিয়োগ বাতিলের কোনও নির্দেশিকা তো আমরা পাইনি, কোনও বারণ ছিল না। তবু শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেউ এলেন না। আবার আমরা উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস চালাব কী করে, সে কথা তো প্রশাসন বা শিক্ষা দফতর কিছু বলছে না।”
২০১৬ সালের নিয়োগের প্যানেলে থাকা কেউ স্কুলে যেতে পারবেন না, এমন কোনও সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়নি। উল্টে, বেশিরভাগ স্কুলের প্রধানেরা ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফোন করে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তবু তাঁরা অনেকেই আসেননি। তাতেই আশঙ্কায় রয়েছেন একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। জলপাইগুড়ি জেলায় একশোর কাছাকাছি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা বিঘ্নিত হতে পারে শিক্ষক-সঙ্কটের জেরে। মাধ্যমিকের ফলে এই জেলা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। এমনিতেই জেলায় শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। তার উপরে নতুন করে এসএসসি-নিয়োগ ধাক্কা সেই সঙ্কট বাড়িয়ে দেবে বলেই আশঙ্কা। জলপাইগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “আগামিকাল দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ডেকে পাঠিয়েছি। ওঁরা আসবেন বলেছেন। কোর্টের রায় যা-ই হোক, আপাতত ওই দু’জন ছাড়া, ক্লাস শুরু করতে পারব না।”
আগামী সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ফের নিয়োগ মামলার শুনানি। সে দিন চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ মিলবে কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে। ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের দাবি, স্থগিতাদেশ মিললেও তা অন্তর্বর্তী নির্দেশ হবে, মামলাটি খারিজ হয়ে যাবে না। স্কুলে অনুপস্থিত এক ‘যোগ্য’ শিক্ষকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “অন্য চাকরির চেষ্টা করছি। আমার সর্বভারতীয় পরীক্ষা পাশ করা রয়েছে, অন্য চাকরি পেতেই পারব। তাই আপাতত স্কুলে যাব না।” এক প্রধানশিক্ষকের কথায়, “আখেরে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারাই।”