প্রকৃতির কোলে: দুয়ারে পাঠশালা। সোমবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে একটি স্কুলের সামনে কচিকাঁচাদের নিয়ে চছে ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।
সোমবারই জলপাইগুড়ি শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রির আশপাশে। সারাদিন কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। এমন শীতের মধ্যে খোলা জায়গায পলিথিন টাঙিয়ে পড়ুয়াদের পড়াশোনা হলে ঠান্ডা লাগবে না? এই চিন্তা অভিভাবক থেকে শিক্ষক সকলেরই। যদিও সরকারি নিয়মের গেরোয় শিক্ষকদের অনেকেই কিছু বলতে পারছেন না। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘পাড়ায় পাঠশালা’ শুরুর কথা জলপাইগুড়িতে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে অষ্টম শ্রেণি থেকে স্কুল খুলে যাবে। অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরও প্রশ্ন, অষ্টম থেকে স্কুল খুলতে পারলে বাকি নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের কেন স্কুলের বাইরে রেখে দেওয়া হচ্ছে? ক্লাসঘরে চার দেওয়ালের নিরাপত্তা থাকতেও কেন খোলা জায়গায় ক্লাস করাতে নিয়ে যাওয়া হবে নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের?
নির্দেশিকা অনুসারে, শহরের লাগোয়া দু’তিনটে পাড়ার মধ্যে একটি ‘খোলা জায়গা’ বেছে নিতে হবে ‘পাড়ায় পাঠশালা’র জন্য। সেখানে অস্থায়ী ভাবে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। অস্থায়ী পরিকাঠামো বলতে একটি ছাউনি। পানীয় জলের ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানেই উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। প্রথমত, কনকনে ঠান্ডায় খোলা জায়গায় ক্লাস কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? খোলা জায়গায় শৌচাগার মিলবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন। খোলা জায়গায় পরিকাঠামো তৈরিতে বিপুল খরচ হবে, সেই খরচ দিয়ে স্কুলেই আরও সতর্কতার ব্যবস্থা— যেমন মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলি করে কি ক্লাস হতে পারত না, প্রশ্ন অভিভাবকদেরও।
শহরের প্রায় সব পাড়াতেই স্কুল রয়েছে। কোথাও হাইস্কুল, কোথাও প্রাথমিক। নিজের স্কুলে না হোক, পাড়ার স্কুলে তো সেই এলাকার পড়ুয়াদের বসিয়ে ক্লাস নেওয়া যেত বলে দাবি অভিভাবকদের। জলপাইগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, “পড়ুয়াদের স্কুলের বাইরে অন্য কোথাও ক্লাস করালে মন বসবে না। আর মন যদি বসে যায়, তারপরে আবার তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সমস্যা হবে।”
জলপাইগুড়ির এক স্কুল পরিদর্শক বলেন, “আমাদের কিছু বলার নেই, করারও নেই। সরকারি নির্দেশ যেমন এসেছে, তেমনিই পালন করতে হবে।”
অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক বিপ্লব ঝাঁ বলেন, “সরকারি নীতিতে স্কুলই সবচেয়ে অবহেলিত। কিছুতেই স্কুলের তালা সব পড়ুয়াদের জন্য খুলতে চাওয়া হচ্ছে না।” বিজেপির জেলা মুখপাত্র তথা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরাজমোহন ঘোষ বলেন, “গাছতলা, খোলা আকাশের নীচে পড়াতে চাইছে। কিন্তু ক্লাসঘরে পড়ুয়াদের ঢুকতে দিতে চাইছে না। এর পিছনে কোনও রহস্য রয়েছে।”
তৃণমূলের এক শিক্ষক নেতার দাবি, “পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য বিবেচনা করেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরোধীদের তো আর সরকার চালাতে হয় না, তাই দায়সারা মন্তব্য করতে পারেন।”