jalpaiguri

‘স্কুল ছেড়ে দিলে বাচ্চাগুলোকে কে পড়াবে?’

জলপাইগুড়ির তিস্তাপাড়ের সুকান্তনগরে ‘তিস্তা স্পেশাল স্কুলে’ শিশু শ্রমিক এবং প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভর্তি নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রক থেকে এই স্কুল পরিচালিত হয়।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:০১
Share:

শিশুদের সঙ্গে আবীর। নিজস্ব চিত্র

বেতন বন্ধ অনেক দিন। তবু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেননি ‘স্পেশাল মাস্টার।’ স্কুলের নামের সঙ্গে ‘স্পেশাল’ শব্দ জুড়ে রয়েছে। তাই এলাকায় লোকমুখে স্কুলটি পরিচিত ‘স্পেশাল স্কুল’ হিসেবে এবং স্কুলের শিক্ষকও ‘স্পেশাল মাস্টার’ নামে। প্রায় আড়াই বছর ধরে বেতন বন্ধ। তাই পুরোহিতের কাজ করে সংসার চালান মাস্টারমশাই। করোনা-কালে সে পথেও বাধা পড়েছিল। তখন রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। এখন অবশ্য রঙের কাজ করতে যান না। পুজোআচ্চা করেন। তবে স্কুলে পড়ানোর কাজটা বাদ দেননি। এটাই একমাত্র রোজগারের পথ হওয়া সত্ত্বেও কোনও বাড়িতে দুপুরের দিকে পুজোর কাজ এলেও যান না। অনেকেই পরামর্শ দেন, বেতন যখন পান না, তখন স্কুলটা ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কানে নেননি ‘স্পেশাল মাস্টার’।

Advertisement

স্নাতকোত্তর পাশ করা বছর পঁয়তাল্লিশের এই শিক্ষক আবীর চক্রবর্তী বলেন, “ভেবেছিলামও কয়েক বার। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছে, এই গরিব ছেলেমেয়েগুলোর কী হবে! আমরা ছেড়ে দিলে বিনা বেতনে আর কেউ কি পড়াতে আসবে?”

জলপাইগুড়ির তিস্তাপাড়ের সুকান্তনগরে ‘তিস্তা স্পেশাল স্কুলে’ শিশু শ্রমিক এবং প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভর্তি নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রক থেকে এই স্কুল পরিচালিত হয়। মিড-ডে মিল দেওয়া হয় রাজ্য সরকার থেকে। স্কুলে মিড-ডে মিলটা অবশ্য চালু রয়েছে। কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শিক্ষক এবং কর্মীদের ভাতা বন্ধ। জেলা শ্রম দফতরের সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক বলেন, “তিন বছর পর পর সমীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্র থেকে সমীক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়নি। স্কুলের খাতেও বরাদ্দ আসছে না।”

Advertisement

রান্নার কাজ করেন তিস্তা পাড়ের অনিতা বিশ্বাস। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। তিনি বললেন, “আমরা সকলেই জানি, মাস্টারমশাই বেতন পান না। কিন্তু রোজ স্কুলে আসেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ভালই হয়, স্কুলে কবিতা-গান, ছবি আঁকার ক্লাসও হয়।”

শতছিদ্র টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা স্কুল। ছোট দু’টি জানালা দিয়ে দুপুরের রোদ ছড়িয়ে পড়ে ক্লাসঘরে। দেওয়ালে পোস্টারে লেখা, ‘শিক্ষা প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার।’ সে দিকে আঙুল তুলে ‘স্পেশাল মাস্টার’ বললেন, “এলাকার লোকেদের এই কথাটিই বোঝানোর চেষ্টা করি।” আবীরের মতোই বিএ পাশ রতন মণ্ডলও এই স্কুলের শিক্ষক। দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে তিনি বাড়ির সামনে ছোট মুদির দোকান খুলেছেন। বেতন ছাড়াই স্কুলে নিয়মিত আসেন তিনিও। একটি শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক বিপ্লব ঝা বলেন, “বিনা বেতনেও তিস্তা স্পেশাল স্কুলের শিক্ষকরা স্কুল যাওয়া ছাড়েননি। ওঁরাই প্রকৃত শিক্ষক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement