চা পাতা মাপার কাজ চলছে জলপাইগুড়ির রায়পুর চা বাগানে। ছবি - সন্দীপ পাল।
অন্তর্বর্তী কেন্দ্রীয় বাজেটে চায়ের চর্চা এক বিন্দুও নেই। তাই চা উৎপাদক এবং চাষিরা কেউ খুঁটিয়ে দেখছেন পর্যটন প্রকল্প, কেউ কৃষকদের জন্য ঘোষণা করা সুযোগসুবিধার তালিকায় নিজেদের প্রাপ্য সন্ধান করছেন। অনেক খোঁজাখুঁজিতেও তেমন কিছু মিলছে না। কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তী বাজেটে সরাসরি চায়ের জন্য কোনও ঘোষণাই খুঁজে পাননি চা বাগান পরিচালকমণ্ডলী এবং চা শিল্পের সঙ্গে যুক্তেরা।
অন্তর্বর্তী বাজেটে সাধারণত নতুন কোনও প্রকল্পের ঘোষণা থাকে না বলে অর্থনীতিবিদদের দাবি। তবু পুরনো প্রকল্প এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের গত এক বছরের এবং আগামী দিনের কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত থাকে। চায়ের ক্ষেত্রে সেখানেও পেয়ালা শূন্য। তাতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে উত্তরের চা পাড়ায়। বিশেষত, যখন এ বছর একাধিক বাগান বন্ধ এবং ধুঁকছে, উৎপাদনও সারা বছর কম হয়েছে, দামও মিলেছে কম। সেখানে চায়ের ক্ষেত্রে নীরবতা চা-কে ‘বঞ্চনাই’ করা হল বলে মনে করছেন শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের একটা বড় অংশ।
মঙ্গলবার পেশ হওয়া অন্তর্বর্তী বাজেটে চা পর্ষদের জন্য নতুন বরাদ্দের ঘোষণা নেই। পুরনো বরাদ্দের কতটা খরচ হয়েছে, তারও উল্লেখ নেই। চা শ্রমিকদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গত বছর বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই তহবিলে বরাদ্দ জারি থাকবে কি না, উল্লেখ নেই। গত কয়েক বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ চায়ের বাজার খুব একটা বাড়েনি। উল্টে, করোনার পর থেকে উৎপাদন বেড়েছে। বেশ কয়েক বছর দেশের বাজারে চা উদ্বৃত্ত হয়ে চলেছে। তার ফলে, দামও কম হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চায়ের উৎপাদন খরচ কমিয়ে লাভজনক করা বিদেশের বাজার ধরার আলোচনা চলছে। কেন্দ্রের নীতি ছাড়া, তা সম্ভব নয়। তেমন কোনও উল্লেখ কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তী বাজেটে নেই।
বাজেট চা না মিললেও, পর্যটন প্রকল্প দেখে সেখানেই ‘লাভ’ খুঁজছেন ‘চা-ওয়ালা’রা। পর্যটন প্রকল্পে কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ঘোষণা করা হয়েছে। চা পরিচালকদের একাংশের দাবি, এই সুযোগে চা পর্যটন উপকৃত হতে পারে। চা বাগান পরিচালকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন’-এর ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান জীবনচন্দ্র পাণ্ডে বলেন, ‘‘চা ক্ষেত্র বঞ্চিত, এমন বললে ভুল কিছু বলা হবে না। কিছু দিকনির্দেশ খুবই প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে, চায়ের দাম এবং বাজার নিয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে কোনও উল্লেখ থাকবে ভেবেছিলাম। কেন্দ্রীয় বাজেটে চা না থাকায় তার প্রভাব নিচুতলাতেও আসবে।’’
উত্তরবঙ্গের চা উৎপাদনের বড় অংশ আসে ছোট বাগান থেকে। সেই ছোট বাগান, অর্থাৎ, চা চাষিরা চা ছেড়ে কৃষক প্রকল্পে সুবিধে খুঁজছেন। ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কৃষকনিধি প্রকল্পে প্রাপকের সংখ্যার লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ছোট চা চাষিরা যদি সে সুবিধা পান, তা হলে ভাল হবে।’’ জলপাইগুড়ি জেলায় প্রধানমন্ত্রী কৃষকনিধি প্রকল্পের প্রাপকের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আবেদন করে রেখেছেন অন্তত ৩০ হাজার। তালিকায় থাকা কৃষকেরাই এখনও প্রকল্পের সুযোগ পাননি, চা চাষিরা কবে সুযোগ পাবেন, সে সংশয়ও রয়েছে।