চিন্তিত: উৎসবের আয়োজন চলছে, আছে উদ্বেগও। মাঝেরডাবরি চা বাগানে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
উৎসবের দিনেও পিছু ছাড়ল না নতুন নাগরিকত্ব আইন আর এনআরসির আতঙ্ক। আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন চা বাগানের অন্দরে কিংবা চা বাগান লাগোয়া গির্জায় বড়দিন পালনের সময়ও এই আলোচনা।
সরকারি হিসেব মতে আলিপুরদুয়ার জেলায় ৬৪টি চা বাগান আছে। সেখানকার বাগান-শ্রমিকদের অনেকেই বংশ পরম্পরায় এই রাজ্যে রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগের নিজের জমি নেই। বাগানের কোয়ার্টার্সেই থাকেন তাঁরা। এখন এনআরসি চালু হলে তাঁরা কী করে জমির কাগজপত্র দেখাবেন, তা নিয়ে চিন্তায় অনেকে।
আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া মাঝেরডাবরি চা বাগানের গির্জা লাইনে স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বাস করেন বাবলি এক্কা। স্বামী বাগানের স্থায়ী কর্মী। আর বাবলি অস্থায়ী শ্রমিক। বড়দিন উপলক্ষে আলোয় সেজেছে তাঁদের কোয়ার্টার্স। কিন্তু উৎসবের দিনেও বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে বাবলি বলেন, ‘‘চা বাগানের কোয়ার্টার্সেই বংশ পরম্পরায় বাস করছি। আমাদের পরিচিত শ্রমিকদের কেউ কেউ চা বাগানের বাইরে জমি কিনেছেন। কিন্তু আমার স্বামীর নিজস্ব জমি নেই। ফলে এনআরসি হলে দলিল কী ভাবে দেখাব, জানি না।’’
কুমারগ্রামের নিউল্যান্ডস চা বাগানের বাসিন্দা সনু খেরিয়া বলেন, ‘‘আমাদের সামান্য জমি রয়েছে। কিন্তু বাগানের অনেকেরই জমি নেই। তাঁরা কোয়ার্টার্সে বাস করেন। এনআরসি নিয়ে তাই অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন।’’ ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানের বাসিন্দা বসন্ত টোপ্পোও জানান, ‘‘এনআরসি নিয়ে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক রয়েছে।’’
তৃণমূল জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামীর অভিযোগ, ‘‘এনআরসি নিয়ে অসমের পরিস্থিতি দেখার পর গোটা দেশেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। চা শ্রমিকরাও তার ব্যতিক্রম নন। এর জন্য দায়ী বিজেপি। আমরা মানুষকে বলছি, এ রাজ্যে তৃণমূল কোনও অবস্থাতেই এনআরসি করতে দেবে না। এটা চা বাগানের শ্রমিকদেরও আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা বোঝাবেন।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা পাল্টা বলেন, ‘‘জেলার চা শ্রমিকরা বংশ পরম্পরায় দেড়শো-দুশো বছর ধরে বাগানে থেকে কাজ করছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা প্রত্যেকেই ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু তৃণমূল নেতারা মিথ্যা কথা বলে এনআরসি নিয়ে তাঁদের মনে ভয় ঢোকাচ্ছেন। কিন্তু চা শ্রমিকদের যে কোনও ভয় নেই, আমরাও সেটা বোঝাব তাঁদের।’’