শনিবার শেষ হয়ে গেল এ বছরের মতো চা পাতা তোলা। ছবি - সন্দীপ পাল।
এক রাশ ‘অপ্রাপ্তি’ নিয়েই শেষ হল চা পাতা তোলার মরসুম। চা পর্ষদের নির্দেশে এ রাজ্যে শনিবারের পরে, ছোট-বড় কোনও বাগানেই চা পাতা তোলা হবে না। বন্ধ হতে চলেছে চা তৈরির কারখানাও। শীতের সুখা সময়ে চা গাছের পরিচর্যা চলবে। ফের শীতের শেষে, বসন্তে চা পাতা তোলা শুরু হবে। চা শিল্পে যুক্তদের দাবি, কষ্ট নিয়েই শেষ হল এ বছরটা। সাম্প্রতিক অতীতে চায়ের জন্য এমন খারাপ বছর এসেছে কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে। বছরের শেষের দিকে, খারাপ খবর এসেছে চায়ের দাম নিয়েও। ৫১ নম্বর নিলামে, শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্রে চায়ের দাম মিলেছে অনেকটাই কম। উত্তরের একটি বড় চা প্রতিষ্ঠানের গ্রুপ ম্যানেজারের কথায়, “২০২৩ সালকে চা শিল্পের দুঃসময় বলা যায়।”
চা পরিচালকদের একাংশের দাবি, এখনও পর্যন্ত চা পর্ষদ যা তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে বছরের শেষে উৎপাদনে অন্তত ১৫ শতাংশ ঘাটতি থাকে। কবে চা পাতা তোলা শেষ হবে, প্রতি বছরেই তা আগেই চা পর্ষদ জানিয়ে দেয়। চা বাগানগুলি প্রতি বছরই সেই সময়ের দিন কয়েক বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। কারণ, শীতের শেষে বৃষ্টিতে চা পাতা তরতরিয়ে বাড়তে থাকে। এ বছর এমন কোনও অনুরোধ চা বাগানগুলির তরফে করা হয়নি, উল্টে, চা পর্ষদের সময়সীমা আসার আগেই পাতা তোলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু বাগানে। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “বছরে এত লোকসান হয়েছে, যে বহু ছোট চাষি চা গাছ তুলে অন্য ফুল-ফলের চাষের কথা ভাবছে।”
পাতার সঙ্কটে এ বছর বহু ‘বটলিফ’ তথা পাতা কিনে চা তৈরি করার কারখানা বছরভর বন্ধই ছিল। ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র সচিব সুমিত ঘোষ বলেন, “চায়ের জন্য এত খারাপ বছর আগে এসেছে কি না জানি না! এক সঙ্গে অনেকগুলি খারাপ খবর এসেছে এ বছরে।” শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে এ বছর ৫১তম নিলাম হয়ে যাওয়ার পরে, চা পাতার গড় দাম কেজি প্রতি ১৬৮ টাকার কাছাকাছি। সেখানে গত বছর গড় দাম ছিল কেজি প্রতি ১৮২ টাকারও বেশি। প্রায় ১৫ টাকা দামের ফারাক। ফলে, চা শিল্পে রাজস্বও কমবে। বাগান পরিচালকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান জীবনচন্দ্র পাণ্ডের কথায়, “আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই আশঙ্কায় থাকলাম!”