গত শতকের মাঝামাঝি কলকাতার কাছে হিন্দমোটরে তৈরি হয়েছিল হিন্দুস্তান মোটর্সের কারখানা। সেখান থেকে পথে নেমেছিল অ্যাম্বাসাডর গাড়ি। এক সময়ে একচেটিয়া বাণিজ্য করা এই গাড়ি কারখানা দু’বছর আগে বন্ধ হয়ে গেল একটিই কারণে, শেষ দিকে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিল না তারা।
এই একটা জায়গায় নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন চা বাগানের উপরে নির্ভরশীল সকলেই। ১৭৭ বছর ধরে চলা নগদে মজুরির ব্যবস্থা শেষ হয়ে এ বার সেখানে ঢুকে পড়ছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা। এর পর থেকে বাগানে থাকবে এটিএম বা মাইক্রো এটিএম, কাছেই খোলা হবে ব্যাঙ্কের শাখা। আর এগুলো কিছুই যদি না হয়, তা হলে অন্তত থাকবেন ব্যাঙ্কের বিজনেস করেসপন্ডন্ট। তিনিই বাগানের সঙ্গে ব্যাঙ্কের যোগাযোগ রক্ষা করবেন। এবং এ সবই হবে আগামী বছর ৩১ মার্চের মধ্যে।
বাগানের লোকজন বলছেন, আসলে ঠেকে শিখলেন বাগান কর্তৃপক্ষ। নোট বাতিলের পর থেকেই শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া নিয়ে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। কাজ চালিয়ে গেলেও এ মাসের মজুরি এখনও পাননি শ্রমিকরা। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) ও ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে হওয়া সাম্প্রতিক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট খোলা হবে এ বারে। সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করা হবে। এটিএম বা মাইক্রো এটিএম তো বটেই, খোলা হতে পারে ব্যাঙ্কের শাখাও। পাশাপাশি যেখানে ব্যাঙ্কগুলি টাকা পাঠাতে অপারগ, সেখানে জেলাশাসকদের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মজুরির টাকা বণ্টনের বিকল্প পথও খোলা থাকবে।
উত্তরবঙ্গে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ চা শ্রমিক রয়েছে। মাঝে কিছু টাকা মেলায় নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত মজুরি দেওয়া হলেও টাকার অভাবে তার পর থেকে সবই বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে গত ১৬ তারিখ আরবিআই-এর আঞ্চলিক অধিকর্তা রেখা ওয়ারিয়র, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি ও চা শিল্পের কর্তাদের সঙ্গে ‘ভিডিও কনফারেন্স’ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত রেখাদেবীকে ফের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থসচিব এইচ কে দ্বিবেদী। চিঠির বয়ান অনুযায়ী, ৩১ মার্চের মধ্যে বাগানে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা তৈরি হতে হবে।
আরও ঠিক হয়েছে, এখন যেখানে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা নেই, সেখানে জেলাশাসকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা জোগানো হবে। এই ব্যবস্থা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অথবা যতক্ষণ না ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বাগানে না পৌঁছচ্ছে, ততক্ষণ চালু থাকবে। দিন দশেক পরে গোটা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন অতিরিক্ত সচিব (শ্রম দফতর)।
এ সব সিদ্ধান্তে কিছুটা আশার আলো দেখছেন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহা, কফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তী প্রমুখ। বুধবার অরিজিৎবাবু বলেন, ‘‘আশা করছি কাল (বৃহস্পতিবার) থেকেই এই ব্যবস্থা কার্যকর হতে শুরু করবে।’’ বিজয়গোপালবাবুর দাবি, ব্যাঙ্কে চাহিদামাফিক টাকা মিলছে না। তাই ব্যাঙ্কের উপরে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না শ্রমিকরা। টাকার জোগান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাই এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।