—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আলিপুরদুয়ারে মৃত্যু চা শ্রমিকের। অভিযোগ, অনাহারে, চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে মধু চা বাগানের শ্রমিক ধনি ওরাওঁয়ের। এই ঘটনায় এক দিকে চা বাগান কর্তৃপক্ষর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ঠিক তেমনই প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকারও।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এক টানা বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে নতুন করে চালু হয় মধু চা বাগান। আশার আলো দেখতে শুরু করেন বাগান শ্রমিকেরা। অভিযোগ, তার পরেও চা বাগানে বেশ কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে। বাগান শ্রমিকদের কথায়, বর্তমান সময়েও অনিয়মিত বেতন, রেশন। এই পরিস্থিতিতে বহু বাগান শ্রমিককেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। দাবি, ধনি ওরাওঁ এই পরিস্থিতিরই শিকার। অভিযোগ, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় বাগানের কাজ মিলছিল না সে ভাবে। অন্য দিকে, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্ত না থাকায় রেশনও পাচ্ছিলেন না তিনি। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী-সহ আত্মীয় পরিজনের সহযোগিতায় কোনও মতে তাঁর পরিবারের। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ওরাওঁ দম্পতি অত্যন্ত রুগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। ধনির মৃত্যুর পর অবশ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের টনক নড়ায় তাঁর স্ত্রী আশারানির ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে।
ধনির মৃত্যুর পরেই পশ্চিমবঙ্গ চা মজুর সমিতির তরফে তথ্যসন্ধানী কমিটি গঠন করা হয়। দুই আইনজীবী সেই কমিটিতে রয়েছেন। কমিটির সদস্যেরা এলাকা-সহ মৃতের বাড়ি পরিদর্শন করেন। তাঁদের দাবি, অনাহারেই মৃত্যু হয়েছে চা শ্রমিকের। বুধবার কমিটির সদস্য পূর্বায়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ চা মজদুর সমিতি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম গঠন করে। আমরা তদন্ত করে দেখি, অনাহারই প্রধান কারণ। পরিবার বা প্রতিবেশীরা যখন যে ভাবে সাহায্য করতেন, সে ভাবেই খেতে পেতেন তাঁরা। কিন্তু প্রতিবেশীরাও তো পর্যাপ্ত রেশন পান না। তাঁরাও সে ভাবে সাহায্য করতে পারেন না। আমরা তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে জেলা শাসকের কাছে দেখা করতে যাই। কিন্তু তার সময়ের অভাবে অতিরিক্ত জেলা শাসকের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তাদের সমস্ত ঘটনা আমরা বলি। একটা কাজ হয়েছে সেটা হল, মৃত ধনি ওরাওঁয়ের স্ত্রীকে সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। জরুরি ভিত্তিতে যে ত্রাণ দেওয়া হয়, তা দেওয়া হয়েছে।’’ এ ব্যাপারে চা বাগানের মালিকপক্ষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
বাগান শ্রমিক তথা ধনি ওরাওঁয়ের প্রতিবেশী রাজ কেরকেট্টা বলেন, ‘‘বাগান যখন বন্ধ ছিল, তখন পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। বাগান খোলার পর আমরা ভেবেছিলাম, হাল হয়তো ফিরবে। কিন্তু তা আর হল না। রেশন ব্যবস্থায় অনিয়ম। যার ফলে আমরা যে সাহায্য করব ধনিকে, সেটাও সব সময় হত না। সকলেরই পরিবার রয়েছে। ধনির শারীরিক সমস্যা ছিল। যার কারণে তাঁকে বাগান থেকে বিভিন্ন সময় কাজ থেকে বাদ দিত৷ আমরা অনুরোধ করে তাকে পুনরায় কাজে ফেরাতাম। এর পর সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া যখন থেকে শুরু হল, ধনিদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে লাগল। তাদের আধার কার্ড নেই। যার কারণে তারা রেশনও পেত না।’’
আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টা যে ভাবে দেখানো হচ্ছে, আদৌ সেটা সে রকম নয়। আনাহারে তার মৃত্যু হয়নি। তার শারীরিক সমস্যা ছিল। তার স্ত্রীয়ের খানিকটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তার পরিবার তাতে নিমরাজি। আমরা ধনি ওঁরাওয়ের স্ত্রীকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখারও কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার রাজি হয়নি। একটি সংস্থাকে গোটা ঘটনাকে এ ভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্প নিয়ে একাধিক বার আমরা বাগানে যাই। অনাহারের মতো ঘটনা কোথাও নেই।’’ কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা বলেন , ‘‘বাগান বহু দিন বন্ধ ছিল। আমরাই বিধানসভায় বারবার আওয়াজ তুলে সেই বাগান খুলিয়েছিল। তবে পেমেন্টের একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু অনাহারে যে মৃত্যু, এটা আমার জানা ছিল না। অবশ্যই এটা নিয়ে যা যা পদক্ষেপও গ্রহণ করা দরকার, আমরা করব।’’