রোহিনী বাগানে চা পাতা তোলার ব্যস্ততা। নিজস্ব চিত্র।
উৎপাদকদের অনুরোধে ‘সাড়া’ না দিয়ে ভারতীয় চা পর্ষদ তথা টি বোর্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিল, এ বছর ৩০ নভেম্বরের পরে আর পাতা তোলা যাবে না। শরৎ শেষ হতে না হতেই শীতের শুরুতে এ বছর চা পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারতে। চা পর্ষদের দাবি, চায়ের ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং কোনও ভাবে তা থেকে সরে আসা সম্ভব নয়। এ দিকে, মাসখানেক আগে পাতা তোলা বন্ধ হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ছোট এবং মাঝারি চা উৎপাদকেরা। তাঁরাই চা পর্ষদকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে শেষ বারের মতো অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সে অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছে পর্ষদ।
চলতি বছরে একেই আবহাওয়ার খামখেয়ালে চায়ের উৎপাদন কমেছে। পাতা তোলার সময়ও কমে এলে উৎপাদন আরও কমবে, এমনিই দাবি করা হচ্ছে। ফলে, আগামী মরসুমে ছোট এবং মাঝারি একাধিক চা বাগান বন্ধের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। চা উৎপাদকদের একাংশ মনে করছেন, ‘অসম লবি’র চাপে পর্ষদের পাতা তোলা বন্ধের সময়সীমা এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তের মূল্য গুণতে হবে পুরো চা-বাণিজ্যকে।
যদিও চা পর্ষদের আধিকারিকদের দাবি, কোনও ‘লবি’র চাপে এই সিদ্ধান্ত হয়নি্। দেশের চায়ের বাজারে চাহিদা এবং জোগানের সামঞ্জস্য রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত। পর্ষদের এক আধিকারিকের কথায়, “দেশের মোট উৎপাদনের দশ শতাংশ উদ্বৃত্ত থাকে। এই চা নষ্ট হয়। সেটা বাজারে ঢুকে পড়ায় সামগ্রিক গড় দামও কম হয়। শীতের শুরুতেই পাতা তোলা বন্ধ হলে উদ্বৃত্তের পরিমাণ কমবে, তেমনিই গুণগত মানও বাড়বে। এ সবই পরীক্ষা করে দেখা হবে এ বছর।” পর্ষদ সূত্রের এ-ও দাবি, এ বছর যে নভেম্বরেই বন্ধ হবে, সে কথা গত অগস্টেই ঘোষণা হয়েছিল। কাজেই সকলে প্রস্তুতির অনেকটাই সময় পেয়েছে।
ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘সিস্টা’-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “৩০ নভেম্বরের পরে নেপালের চা ভারতে ঢুকবে না, সে নিশ্চয়তা আগে টি বোর্ডকে দিতে হবে। না হলে, একে উৎপাদন কম, তার পরে সস্তা নিম্ন মানের চা দেশের বাজারে ঢুকলে ছোট-মাঝারি চা বাগানগুলি শেষ হয়ে যাবে।”
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফোরাম অফ স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান রজত কার্জি বলেন, “উৎপাদন না কমিয়ে চা পর্ষদ চায়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চেষ্টা করুক। তাতেও বাজারে উদ্বৃত্ত চায়ের পরিমাণ কমবে।”