— প্রতীকী চিত্র।
চা বাগান লাগোয়া নদী থেকে ‘বেআইনি’ ভাবে বালি পাথর তোলা বন্ধ করতে এ বার দার্জিলিং পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হল চা বাগান মালিকদের সংগঠন টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (টাই)। গত ৩ ডিসেম্বর সংগঠনের তরফে পুলিশ সুপার, জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার অবধি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা শুরু হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠনের অভিযোগে বলা হয়েছে, নকশালবাড়ি ব্লকের বহু পুরনো বেলগাছি চা বাগানের পাশে যে ভাবে ‘বেআইনি’ বালি-পাথর তোলা হচ্ছে, তা ভয়ানক পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে। এই কাজ দ্রুত বন্ধ না হলে নদীখাত পরিবর্তণ হয়ে চা বাগানের একাংশ আগামী বর্ষায় বন্যায় ভেসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। গত কিছুদিনে একাধিকবার স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের কথাও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
টাই-সহ উত্তরবঙ্গ শাখার সচিব সুমিত ঘোষ বলেছেন, ‘‘আমরা রোজই এলাকার খোঁজ নিচ্ছি। ভয়ানক পরিস্থিতি বেলগাছি বাগানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, মহানন্দা, বালাসন, ডুমুরিয়া, মাঞ্ঝা বা মেচি নদীতে বালি মাফিয়ারা সক্রিয় বলে অভিযোগ। তা ছাড়া একাধিক চা বাগান বস্তি, জঙ্গল লাগোয়া ছোট নদী, ঝোরা থেকেও বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। নকশালবাড়ির বেলগাছি ছাড়াও জাবরা বাগানের চেঙ্গা নদী থেকে বালি তোলা হয়। অটল চা বাগানের চেঙ্গা নদী, মেচি নদীর রকমজোত, নিউ চামটা, গুলমা, বালাসনের পুটিনবাড়ি এবং এমএম তরাই চা বাগান থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ রয়েছে।
মাটিগাড়ার তারাবাড়ি, কলমজোত, রানাবস্তি, কাওয়াখালি, খাপরাইল, পাথরঘাটার মতো এলাকায় বেআইনি বালির কারবার সব চেয়ে বেশি চলছে বলে অভিযোগ। ছোট ট্রাক থেকে ট্রাক্টর এবং ডাম্পারে বালি পাচার হয় বলে অভিযোগ। ৩-১০ হাজার টাকার বালি তুলে এসে তিনগুণ দামে লাগোয়া বিহারে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ। গত কয়েক বছর ধরে তা চললেও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বেআইনি বালি বা পাথর পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি বলে অভিযোগ।
তিন মাস আগেই মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বালি, পাথরের বেআইনি ব্যবসার অভিযোগ তুলে চিঠি দেন। বিরোধীর পুলিশ-প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের একাংশের মদতে ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করে বালি মাফিয়ারা
কাজের অভিযোগও করেছেন। বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বেআইনি এই ব্যবসা বন্ধ করতে বলে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। যদিও এখনও মহকুমা জুড়ে এ ব্যবসা চলছে।’’
গত বছর মার্চে বালাসনে রাতের অন্ধকারে কাজ করতে গিয়ে তিনজন মারা যান। এর মধ্যে দু’জন নাবালক ছিল। এ ছাড়াও বিধানগরের মুরলিগঞ্জ এবং ঘোষপুকুর গঙ্গারাম চা বাগান এলাকায় বালির ট্রাক্টরের দুর্ঘটনায় আরও দু’জন মারা গিয়েছে। একই ভাবে বেআইনি ক্রাশারের রমরমার অভিযোগও প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে।