জয়ী: তাঞ্জিলা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
যুদ্ধে জয়ী হয়েছে তাঞ্জিলা খাতুন! একটু ভুল হল, তাঞ্জিলা একা নয়, যুদ্ধে জিতেছে মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২৫ পয়েস্তির ফকতের চর। তাঞ্জিলা সেই চরেরই মেয়ে। এ বার সে মাধ্যমিক পাশ করেছে।
ফকতের চরকে গ্রাম না বলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বলা হলেও খুব ভুল হবে না। কারণ, তিস্তা নদীর চরের এই এলাকার মানুষদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। আর তেমনই একটা এলাকা থেকে মাধ্যমিক পাশ করাটাই তো যুদ্ধ! তাঞ্জিলা এ বছর ২৪০ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। সংখ্যা বা শতাংশের নিরিখে দেখতে গেলে এটা কিছুই নয়। কিন্তু চরের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যে ভাবে আমাদের মেয়ে মাধ্যমিকে পাশ করেছে তাতে আমরা গর্বিত। ওর জয়, আমাদেরও জয়।’’
তিস্তার বাঁধ থেকে ফকতের চরের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। শুখা মরসুমে দু’বার নদী বদল করে এবং তিন কিলোমিটার হেঁটে তবে গ্রাম থেকে বাঁধে পৌঁছনো যায়। আর বর্ষায় তো সবটাই নদী। ফলে বর্ষায় ঘরবন্দি থাকতে হয় চর এলাকার লোকজনকে। তিস্তার বাঁধ থেকে কুচলিবাড়ি উপনচৌকি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। সেখান থেকেই এ বছর মাধ্যমিকে বসেছিল তাঞ্জিলা। তার বাবা মহম্মদ আব্দুল গফুর চাষাবাদ করে পাঁচ জনের সংসার চালান। অভাব নিত্যসঙ্গী। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। সুয্যি ডুবলেই আঁধারে ডুবে যায় গ্রাম। নিস্তব্ধ চরে কুপি জ্বালিয়ে রাত জেগে পড়াশোনা করেছে তাঞ্জিলা। তাঞ্জিলার কাকা মহম্মদ সাত্তার আলি জানান, এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। খুব সকালে খাবার সঙ্গে নিয়ে স্কুলে রওনা দিতে হয়। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। কখনও নৌকায় তো কখনও পায়ে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত। সেই কারণে অনেকেই মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।
তাঞ্জিলা অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ। তার কথায়, ‘‘ভবিষ্যতে লেখাপড়া করে স্বনির্ভর হতে চাই।’’