সভা: দাড়িভিটের ধোলাইবস্তিতে সভা করলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত দুই কলেজ পড়ুয়ার পরিবারের প্রতি তাঁর সমবেদনা রয়েছে জানালেও, ওই দুই পরিবার বিজেপির মুখপাত্র হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ তুললেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার ইসলামপুরের দাড়িভিট সংলগ্ন ধোলাইবস্তি এলাকার সভা মঞ্চ থেকে এ কথা জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ব্রিগেড চলো অভিযানের প্রচারে এ দিন ওই সভা করেন তিনি।
শুভেন্দু উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূলের পর্যবেক্ষকও। তিনি বলেন, ‘‘ওই দু’জনের মৃত্যু দুঃখজনক। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমব্যথী, ওদের সমবেদনা জানাতে চাই।’’ এর পরেই বলেন, ‘‘তবে দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি এই পরিবারগুলো গুলির ঘটনায় চিন্তিত নয়। তারা বিজেপির মুখপাত্র হয়েই কাজ করছে। আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। এবিভিপি পিছনে থেকে নিহতদের পরিবারকে সামনে খাড়া করছে।’’
পরিবহণমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নিহত দুই পরিবারের সদস্যরা। নিহত তাপস বর্মণের মা মঞ্জুদেবী, রাজেশ সরকারের মা ঝর্না সরকার বলেন, ‘‘ঘটনার পর এত দিন হয়ে গেল শুভেন্দুবাবু কতবার ইসলামপুরে এসেছে। একবারও কি সময় হল না আমাদের সঙ্গে দেখা করার? এদিনও ধর্না মঞ্চেই ছিলাম। ভেবেছিলাম আসবেন। আসেননি। অথচ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’ পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’’
বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলার সহকারি সভাপতি সুরজিৎ সেন বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু এ ধরনের মন্তব্য করে নিহতদের পরিবারকে অপমান করেছেন।’’
দাড়িভিট কাণ্ডকে সামনে রেখে এলাকায় নিজেদের জমি শক্ত করে বিজেপি। পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। ঘটনার পর একাধিকবার ইসলামপুরে সভা করলেও দাড়িভিটে যেতে পারেননি পরিবহণমন্ত্রী। তৃণমূল এলাকায় পিছিয়ে পড়ায় তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি হেমতাবাদে কর্মিসভা করতে এসে পরিবহণমন্ত্রী ‘ব্রিগেড চলো’ অভিযানকে সামনে রেখে দাড়িভিটে সভা করার কথা জানানোয় দলের কর্মীরা উৎসাহী হন। সম্প্রতি হাইকোর্ট পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় স্কুলে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে। স্কুল চত্বরে কোনও ব্যানার না রাখতে। সেই কারণ দেখিয়ে দাড়িভিটের মাঠের পরিবর্তে এদিন সভা করা হয় ধোলাইবস্তিতে।
যদিও পরিবহমন্ত্রী বলেন, ‘‘দাড়িভিটে দাঁড়িয়ে আমরা সভা করছি। আমাদের আটকানো যাবে না। নন্দীগ্রামেও আটকাতে পারেনি, জঙ্গলমহলে পারেনি। মালদহে কংগ্রেস সাইনবোর্ড হয়েছে। আর ইসলামপুর থেকে দাড়িভিটে এখনও বিজেপি আটকাতে পারেনি।’’
দাড়িভিটে তৃণমূল সভা করতে আসলে তাঁদের লাশের উপর দিয়েই যেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল নিহতদের পরিবার। তা নিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সিপিএম সভা করলে অনুমতি। আপত্তি অন্য কারও ক্ষেত্রে নেই। আমরা তো কারও বিচার করতে আসিনি। ওই পরিবারদের আক্রমণ করতেও আসিনি।’’ আর পরিবহণমন্ত্রীর দাবি, পুলিশ গুলি চালিয়েছে যদি একটি ছবিও দেখাতে পারেন তবে তিনি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীর কাছে তা তুলে ধরবেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিটে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়েছিল দাড়িভিট স্কুল। গুলিবিদ্ধ হয়েই মৃত্যু হয় রাজেশ ও তাপসের। আহত হয়েছে আরও এক ছাত্র বিপ্লব সরকারও। এ দিন পরিবহণমন্ত্রী জানান, নিহতদের পরিবারের লোকেরা এক দিকে বলছেন ক্ষতিপূরণ লাগবে না। আবার হাইকোর্টে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি করেছে।
যদিও ঘটনার এখনও কিনারা না-হওযায় সিআইডি তদন্ত নিয়ে এ দিন ফের প্রশ্ন তুলেছেন নিহতের পরিবারের লোকেরা।
তাদের দাবি, ‘‘সিবিআই তদন্ত হলে ক্ষতি কোথায়? ওরা ভয় পাচ্ছে কেন?’’
পরিবহণমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কারও না কারও ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তাদের। পরিবারগুলো বলছে সিবিআই তদন্ত চাই। সিবিআই আবার কী? সিআইডি তদন্ত করছে পুরো ঘটনার। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’
এ দিন মাঠে বেশ ভাল ভিড়ও হয়েছিল। সেই দেখেই তৃণমূলের কিছু নেতা আশা করছেন, দাড়িভিট এলাকাতে এ বার শাসক দলের পায়ের তলার জমি পোক্ত হবে।