রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
বাঙালির দুর্গোপুজোকে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতির অনুষ্ঠানে ডাক পাননি রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিনিধি। দুর্গাপুজো যে রাজ্যের প্রধান উৎসব, সেই রাজ্যকেই অনুষ্ঠান থেকে ব্রাত্য রাখায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তার পাল্টা জবাব দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গকে আলাদা রাষ্ট্র ভেবে নিজেকে সেই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ভাবেন মমতা।’’ ‘‘কেন্দ্র সুপারিশ করেছে বলেই দুর্গাপুজো হেরিটেজ তকমা পেয়েছে,’’— এমন দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও।
বৃহস্পতিবার রাজ্য সফরে এসে দিনভর কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির অদূরে সুকনার কাছে নিউ চামটায় এক বেসরকারি হোটেলে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতির স্বীকৃতি অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা।
কেন্দ্র আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি ডাক না পাওয়া প্রসঙ্গে মমতা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের পিছনে অবদান রয়েছে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলির। বাংলার কোটি-কোটি মানুষের অবদান রয়েছে। বাংলাকে এত দুর্বল ভাবার কারণ নেই। আজকে দশ বছর ধরে দুর্গাপুজোকে প্রমোট করতে করতে ইউনেস্কো এই পুজোকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। এতে অন্য কারও কোনও অবদান নেই।’’
মমতার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই শাহি-বৈঠক শেষে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কোনও রাজ্যের সুপারিশে তকমা দেয় না ইউনেস্কো। ভারত সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রকই বাঙালির দুর্গাপুজাকে হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য চিঠি দিয়েছিল।’’ সুর আরও চড়িয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘উনি (মমতা) সব সময় ভাবেন, পশ্চিমবঙ্গ একটা আলাদা রাষ্ট্র। আর সেই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী তিনি। এই জন্যই বাংলাদেশের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বলেন। কিন্তু ওঁর জেনে রাখা উচিত, ইউনেস্কোকে বা কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সরাসরি লিখতে পারেন না উনি। এটা বিদেশ নীতির পরিপন্থী। ভারত সরকার সুপারিশ করেছে। এতে ওঁর ক্রেডিট নেওয়ার কিছু নেই। কেন্দ্র সুপারিশ করেছে বলেই ইউনেস্কো হেরিটেজ তকমা দিয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে বিধেঁছেন সুকান্তও। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানেন না বা জানলেও লোককে বিভ্রান্ত করারা চেষ্টা করছেন। হেরিটেজ শব্দটার মানে আগে মুখ্যমন্ত্রীকে বুঝতে বলুন। হেরিটেজ মানে অনেক পুরনো কোনও জিনিস বা অনেকদিন ধরে চলে আসছে এমন কিছু। ওই কার্নিভালের জন্য দুর্গাপুজাকে আলাদা করে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয়নি। কার্নিভালের সঙ্গে হেরিটেজের সম্পর্ক কি? আর যত ক্ষণ না পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রক চিঠি লেখে, তত ক্ষণ পর্যন্ত কেউ হেরিটেজ তকমা দিতে পারে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সরাসরি চিঠি লিখেছেন? তা হলে সেই চিঠি দেখাতে বলুন ওঁকে। উনি কার্নিভাল করলেন আর ওখান থেকে ড্যাং ড্যাং করে নাচতে নাচতে হেরিটেজ তকমা দিয়ে দিল? এটা কি যাত্রাপালা নাকি?’’