নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের কামরায় প্রাক্তন সেনাকর্মীর দেহ। প্রতীকী চিত্র।
রেলের কামরায় গুলি এবং মৃত্যুর পরে রেল পুলিশ এবং রেল আধিকারিকেরা প্রথমে বিষয়টিকে ‘আত্মহত্যা’র ঘটনা বলেই অভিহিত করেছিলেন। গত সোমবার নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের কামরায় প্রাক্তন সেনাকর্মী সঞ্জয় পারমারের দেহ উদ্ধারে পরে সময় গড়াতেই ক্রমে তা বদলাতে শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে, খুনের মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার মৃতের পরিবারের লোকজনও দাবি করেন, প্রাক্তন সেনাকর্মীকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। এর পাশাপাশি, ‘দুর্ঘটনা’র তত্ত্বও ঘুরছে। কিন্তু বন্দুকধারী প্রাক্তন সেনা জওয়ান নিজের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন না কি কেউ বা কারা তাঁকে মেরে পালিয়েছে, সহযাত্রীদের সঙ্গে নিছকই হাতাহাতির ঘটনা না কি কোনও কৌশলী পরিকল্পনা— এখন এ সবেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
রেল পুলিশ জানতে পেরেছে, অসমের এক প্রোমোটারকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করছিলেন সঞ্জয় সিংহ পারমার। ঘটনার দিন সঞ্জয় নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের উপরের আসনে একাই থাকতে চেয়ে, তিনি কামরার যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা করেন বলে অভিযোগ। মদ্যপ অবস্থায় অস্ত্র বার করে হুমকি দিতে শুরু করেন বলেও অভিযোগ। রেল পুলিশ এই ধরনের অভিযোগ তোলা সাত যাত্রীকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তদন্তকারীদের দাবি, সবার বয়ানই মোটের উপরে এক রকম। কিন্তু এর মধ্যে যাঁর সঙ্গে সরাসরি ঝামেলা হচ্ছিল, বন্দুক বার করার সময় যাঁর সঙ্গেই প্রথম হাতাহাতি শুরু হয়, তাঁর হদিস এখনও করতে পারেনি রেল পুলিশ।
ওই কামরায় এক মহিলা যাত্রী দু’টি বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছেন আধিকারিকেরা। সকলেই সঞ্জয়ের আচরণের প্রতিবাদ করেন। কিন্তু নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনে ঢোকার ঠিক আগের সিগনালে ট্রেন দাঁড়াতেই কাকতালীয় ভাবে ঘটনা এত দূর গড়াল কেন? ব্যাগ থেকে ০.৩২ বোরের পিস্তল বার করা থেকে শুরু করে গুলি লেগে সঞ্জয়ের মারা যাওয়া পর্যন্ত ঘটনায় এখনও কিছু অধরা সূত্র বা ‘মিসিং লিঙ্ক’ রয়ে গিয়েছে।
রেল পুলিশের দাবি, হাতাহাতির সময় ‘অসাবধানবশত’ তিনটি গুলি ছুটে যায়। তার একটি লাগে ওই প্রাক্তন সেনাকর্মীর দেহে। কারণ, কোনও আততায়ী তাঁকে মারতে চাইলে দু’টি গুলি কেন ট্রেনের কামরার মধ্যে করবে? সে ক্ষেত্রে সরাসরি তাঁর দেহে তিনটি বুলেটের আঘাতই থাকত। যদিও ময়না-তদন্তে এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ক’টি গুলির আঘাত ওই যাত্রীর শরীরে রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি কার্তুজের খোল উদ্ধার হয়েছে। আবার, কেউ তিন-তিনটি গুলি চালিয়ে নিজেকে মারবেন— এমন তত্ত্ব বিশ্বাস করাতেও তদন্তকারীদের সমস্যা রয়েছে। তাই অন্য যাত্রী বা প্রাক্তন সেনাকর্মীর মতোই ‘শক্তপোক্ত’ কারও সঙ্গে নিহতের হাতাহাতি হয়েছে কি না বা সঞ্জয়ের পিস্তলের মুখ ঘুরিয়ে অন্য কেউ গুলি চালিয়েছে কি না, সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিলিগুড়ি রেল পুলিশ সুপার সেলভা মুরুগন বলেন, ‘‘বিভিন্ন বয়ানে হাতাহাতির সম্ভাবনাই প্রকট হয়েছে। প্রাক্তন সেনাকর্মীর নিজের বন্দুক থেকেই গুলি ছুটে যে তিনি মারা গিয়েছেন, সেটাও পরিষ্কার। কিন্তু সেটা কী ভাবে ঘটল, তারই তদন্ত হচ্ছে।’’