চাঁচলে আইনি সহায়তা কেন্দ্রের উদ্বোধনে হাইকোর্টের বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র
মালদহে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে জেনে ম়ঞ্চেই জেলা পুলিশ সুপারের প্রশংসা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী।
নির্বাচনের চলতি আবহে বিচারব্যবস্থা নিয়ে বলার সময় মঞ্চেই বিচারপতি নির্বাচন প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসকের কাছে শুনেছি, মালদহে নতুন পুলিশ সুপার এসেছেন। এখানে সুষ্ঠভাবে নির্বাচন হয়েছে। এমন কথা শুনতে কার না ভালো লাগে? সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা, সুষ্ঠ সমাজব্যবস্থা থাকলে কার না ভালো লাগে?’’
নির্বাচনের আগে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে কমিশনের কোপে বদলি হতে হয়েছিল জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ওই পদে যোগ দেন সৈয়দ ওয়াকার রাজা। এ দিন মালদহে এসে জেলার নির্বাচন নিয়ে বিচারপতির ওই প্রশংসা তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে জেলা পুলিশ-প্রশাসন। যদিও এই প্রসঙ্গে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।
২০১২ সালে মহকুমা আদালত চালু হওয়ার তিন বছর বাদে শনিবার চাঁচলে মহকুমা আইনি সহায়তা কেন্দ্রটি চালু হয়। তারই উদ্বোধনে আসেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। ছিলেন জেলা জজ মহম্মদ মইনুদ্দিন, চাঁচলের এসিজেএম অর্জুন মুখোপাধ্যায়, জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী, পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা-সহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে কখনও দৃঢ়তা আবার কখনও রসিকতার পাশাপাশি আবেগতাড়িতও হয়ে পড়েন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে আলু-পটল কিনতে গেলে পয়সা দিতে হয়, তেমনি আদালতেও উকিল, মোক্তারদের পয়সা দিতে হয়। কিন্তু অনেক মানুষ রয়েছেন যাদের টাকা খরচ করার সামর্থ নেই। তাদের জন্যই এই আইনি সহায়তা কেন্দ্র। প্রতিটি মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারের কথা সংবিধানেই বলা রয়েছে। তাই আদালতের বাইরেও আমাদের বিকল্প পথ খুঁজতে হচ্ছে। এই সহায়তা কেন্দ্র এমনই একটি বাইপাস।’’
বিচারপতি অকপটে স্বীকার করে নেন যে, আদালতগুলিতে লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলে রয়েছে। তুলনায় বিচারপতির সংখ্যা কম। অনেক আদালতে সুষ্ঠ পরিবেশ নেই। মাটি ভালো না হলে যেমন ফসল ভালো হয় না তেমনি সুষ্ঠ পরিবেশ না থাকলে ভালো কাজ হয় না।
তবে শুধু প্রতিষ্ঠান গড়লেই যে হবে না তাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। এই কেন্দ্রের সহায়তা মানুষ কী ভাবে পাবে তা মানুষকে জানাতে হবে। এই প্রসঙ্গেই বিচারপতির রসিকতা, পাত্রপাত্রীর জন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আবার আগেকার দিনে রাজারা বিয়ের জন্য ঢ্যাড়া পেটাতেন। সেরকম ভাবেই মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলের পড়ুয়াদের মাধ্যমে লিফলেট বিলি করেও প্রচার করা যেতে পারে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে দেশে লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্ট চালু হয়। নানা পরীক্ষানিরীক্ষার পর ১৯৯৫ সালের ৯ নভেম্বর তা পূর্ণতা পায়। মহকুমা আদালত চালু হলেও মহকুমা আইনি সহায়তা কেন্দ্র ছিল না চাঁচলে। ফলে দুঃস্থদের নিখরচায় আইনি সহায়তা পেতে এত দিন মালদহেই ছুটতে হত।
এবার তা চাঁচলে চালু হওয়ায় মহকুমার ছ’টি ব্লকের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। এ জন্য এসিজেএমকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। সেই কমিটি মাসে দু’টো করে লোক আদালত করবে। জেলা জজ মহম্মদ মইনুদ্দিনও বলেন, ‘‘এটা চাঁচলে অনেক আগেই চালু হওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও তা চালু হওয়ায় আমরাও খুশি।’’