প্রতিবাদ: এ ভাবেই রাস্তা আটকে আন্দোলনকারীরা বন্ধ পালন
রাস্তায় বিছিয়ে রয়েছে ইটের টুকরো, কাঁচের ভাঙা বোতল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছেঁড়া জুতোও। ঝাঁপ খোলেনি অনেক দোকানের। স্কুল, মাদ্রাসাতেও হাজিরা কম পড়ুয়াদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরেও এমনই থমথমে মালদহের কালিয়াচকের সুজাপুর। সেই বসতিতে ছন্দে ফেরাতে এ দিন কালিয়াচক থানার পুলিশকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল নেতারা। তাঁদের মতোই সুজাপুরকে দ্রুত স্বাভাবিক করার দাবিতে সরব সাধারণ মানুষও।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেসের ডাকা বন্ধ ঘিরে বুধবার অগ্নিগর্ভ হয়েছিল সুজাপুর। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের উপরে ইট, কাঁচের বোতল দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগও ওঠে। পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, নিরাপত্তবাহিনীর উপরে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, আগুনের ঘটনায় সুজাপুরের সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মালদহ জেলা আদালতে পেশ করে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
এ দিকে, ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও থমথমে সুজাপুর এলাকায়। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সুজাপুর স্ট্যান্ডে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে ছড়িয়ে রয়েছে ইটের টুকরো, ভাঙা কাঁচের বোতল। নয়মৌজা ময়দান থেকে পোড়া গাড়ি উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। তবে ময়দান জুড়ে রয়েছে ছাই হয়ে যাওয়া গাড়ির যন্ত্রাংশ। সেই ছাই ডিঙিয়েই স্কুল, মাদ্রাসায় যাচ্ছে পড়ুয়ারা।
ওই মাঠের পাশেই রয়েছে সুজাপুর নয়মৌজা হাই স্কুল এবং নয়মৌজা সুবহানিয়া হাইমাদ্রাসা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাই স্কুলে সাড়ে তিন হাজার এবং মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তবে এ দিন দুই স্কুলেই পড়ুয়াদের হাজিরা অত্যন্ত কম ছিল।
সুজাপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নাজার হোসেন বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। হাজিরাও কম। এমন অবস্থায় দ্বিতীয় ক্লাসের পরেই ছুটি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে সুজাপুর।’’ হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আদিল হোসেন বলেন, ‘‘মাঠের পাশেই মাদ্রাসা। পড়ুয়াদের মধ্যে ভয় রয়েছে। তবে ভয়ের পরিবেশ দ্রুত মিটিয়ে সুজাপুরের মতো মাদ্রাসাও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে।’’
কংগ্রেসের বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রথমত পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ। দ্বিতীয়ত পুলিশের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুরের নালিশ— দু’টি নিন্দনীয়। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি যাতে সাধারন মানুষকে গ্রেফতার না করা হয়।’’
মালদহ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের কেতাবউদ্দিন বলেন, ‘‘পুলিশকে আইনত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় যাতে শান্তি বজায় থাকে সে জন্য আমরা পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছি।’’
ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।