পথে: নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে গুঞ্জরিয়া বাজার এলাকায় রাস্তায় আন্দোলন। ছবি: অভিজিৎ পাল
পরপর বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে দুর্ভোগ। মঙ্গলবারও মালদহ ট্রেনে শিলিগুড়ির দিকে যাওয়া যাচ্ছে না। কেবল কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগটুকু রয়েছে। কিন্তু গৌড় এক্সপ্রেসের যে লিঙ্ক বালুরঘাটে যেত, সেটি যাচ্ছে না। তবে আংশিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে বুধবার। কিন্তু ইন্টারনেট রবিবার বিকেল থেকে বিপর্যস্ত। মঙ্গলবার বিকেলে একটু একটু করে ইন্টারনেট ফিরেছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভও অব্যাহত। তার প্রভাব পড়ছে জাতীয় সড়কের উপরেও। এর সঙ্গে রয়েছে বাজারের দর। যে আনাজেই হাত দেওয়া হোক, ছ্যাঁকা লাগছে। টানা এই দুর্ভোগ চলতে থাকায় নাভিশ্বাস উঠেছে অনেকেরই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বিরাট অঙ্কের টাকার ক্ষতি হচ্ছে। মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘প্রতিটা দিন এই ভাবে চললে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা দু’পক্ষেরই ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতি সামাল দেওয়া যাবে না। ’’
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হল গুঞ্জরিয়া বাজার এলাকায়। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়। তাতে দেয় ঘণ্টার মতো যান চলাচল বন্ধ ছিল জাতীয় সড়কে। বিক্ষোভের জন্য ইসলামপুরেই আটকে দেওয়া হয়েছিল সমস্ত ট্রাক, বাস। টোটো, ছোট গাড়িও আটকে দিয়েছিল পুলিশ। সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। ইসলামপুরের পুলিশ সুপার সচিন মাক্কার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’’
ভোগান্তি অবশ্য শুরু হচ্ছে সকালে বাজার থেকেই। মালদহের পাইকারি বাজারেও মঙ্গলবার সেঞ্চুরি হাঁকালো পেঁয়াজ। খুচরো বাজারে বিক্রি হল ১২০-১৩০ টাকা প্রতি কেজিতে। আবার কালিয়াচকে দাম ছিল ১৫০ টাকা প্রতি কেজি। এ ছাড়া চাঁচল, গাজল, মানিকচক, রতুয়ার বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা প্রতি কেজি দরে। পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের দাবি, নতুন আইন নিয়ে পথের বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলা হওয়ায় পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আসছে না। জেলার ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রে খবর, পেঁয়াজ বোঝাই বেশ কিছু ট্রাক আটকে রয়েছে নদিয়ায়। বিভিন্ন জায়গায় ট্রাক চালকরা আসার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। বিষয়টি প্রশাসনকে বলা হয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুন, আদার মতো আনাজের দামও চড়ছে চড়চড়িয়ে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত চার দিন ধরে ট্রেন বন্ধ থাকায় এবং সড়ক পথেও বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকে যে সমস্ত আনাজ মালদহের পাইকারি বাজারে আসত, তা আসছে না। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকেও গোলমালের জেরে কৃষকরা আনাজ নিয়ে আসছেন না পাইকারি বাজারে। আমদানি কম হওয়ায় তাই শীতের মরসুমেও বেড়েছে আনাজের দাম।
বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, সমস্ত আনাজ অগ্নিমূল্য হলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসীন। যদিও সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানো বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির তরফে ৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যাপারে বাড়তি নজরদারিও চলছে।’’ জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘মালদহের বাজারে আসার জন্য পেঁয়াজ বোঝাই ন’টি ট্রাক নদিয়ার পলাশিতে আটকে রয়েছে। ওই ট্রাকগুলি মালদহে আনতে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।’’