স্বেচ্ছাসেবী: সবুজসাথীর সাইকেলে ঝাজাঙ্গি থেকে দোমোহনীতে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
অন্ধকারে মোবাইলের আলো জ্বেলে আতঙ্কিত যাত্রীদের পথ দেখাচ্ছে একদল পড়ুয়া। পড়ে থাকা রেলের কামরার ভিতরে সেই আলো ফেলে আরও কেউ সেখানে রয়ে গেল কি না, খুঁজেছে তারা। মেঠো রাস্তায় বালিতে চাকা আটকে গেলে অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলছে দু’-তিন জন পড়ুয়া। এমন নানা দৃশ্য চোখে পড়েছিল বৃহস্পতিবার রাতের দোমোহনীতে। সেই রাতের পরে শনিবারে ফের পড়ুয়াদের দল সবুজ সাথী সাইকেলে চেপে এসেছিল রেলের কাজ দেখতে। যদিও সে রাতে সাহায্যের জন্য এ দিন তাদের কেউ সাধুবাদ দেয়নি। উল্টে আরপিএফ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করেছে।
ধূপগুড়ির ঝাঝাঙ্গিতে থাকে তারা। দোমোহনী থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূর। ভূজারিপাড়া এমসি হাইস্কুলের পড়ুয়াদের দলটি বৃহস্পতিবার প্রথমে এসেছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন দেখার কৌতূহলে। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র প্রণব রায় বলল, “সে দিন আমরা যখন এসেছিলাম, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেখি, আতঙ্কিত যাত্রীরা কাঁদতে কাঁদতে প্রাণভয়ে দৌড়চ্ছেন। কেউ কেউ অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। আমাদের সকলের পকেটে মোবাইল ছিল। আমরা মোবাইলে আলো জ্বেলে যাত্রীদের পথ দেখিয়েছি।” পড়ুয়ারা জানায়, এক পুলিশকর্মী সে সময়ে তাঁদের কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধারকাজে যান। পড়ুয়ারা অন্ধকার কামরার ভেতরে মোবাইলের আলো ফেলে, পুলিশকর্মীরা যাত্রীদের খুঁজতে থাকেন। দ্বাদশ শ্রেণির আর এক ছাত্র কৌশিক রায় বলল, “আমরা তো অ্যাম্বুল্যান্সও ঠেলেছি। মাটির রাস্তায় বারবার অ্যাম্বুল্যান্সের চাকা আটকে যাচ্ছিল। আমরা ধাক্কা দিয়ে গাড়ি এগিয়ে দিয়েছি।”
শনিবার সকাল থেকেও অজস্র মানুষ ভিড় করেছিল দুর্ঘটনাস্থলে। এখনও কামরাগুলি মাটিতে পড়ে রয়েছে। কোনটি শুয়ে আছে, কোনটি অর্ধেক হেলে। সেগুলি দেখতেই ভিড় জমিয়েছিলেন আশেপাশের এসাকাবাসী। ভিড় দেখে তেলেভাজা, শুকনো খাবারের দোকানও বসে গিয়েছিল এলাকায়। সেই ভিড়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে দেখা গেছে এই পড়ুয়াদেরও। প্রণব বলে, “কম্পিউটারক্লাসে এসেছিলাম। ভাবলাম দেখে যাই। ট্রেনের কামরাগুলো তোলা হয়েছে কি না, তা দেখার কৌতূহল ছিল।”
তবে গত বৃহস্পতিবার রাতের মতো তাঁদের এ দিন কেউ ডাকেনি। উল্টে কামরার কাছাকাছি যেতে এক আরপিএফ জওয়ান লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসে। কাজে বিঘ্ন ঘটবে বলে উৎসাহীদের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি এ দিন। স্থানীয় প্রবীণরা বলছেন, সেটাই স্বাভাবিক।