পাঞ্জারিপাড়ায় কেআইটিএম কলেজের পুজো।
ফজরের নমাজ পড়েই কলেজে চলে এসেছেন জবাইদুর। পুজোর জোগাড় দিতে হবে যে! এ দিকে সাতসকালেই কলেজে হাজির রুমি আনসারিও। পুজোর বেলা বয়ে যাচ্ছে। পুরোহিত তাড়া দিচ্ছেন। তাই আর এক ছাত্রী মধুমিতার সঙ্গে পুজোর উপকরণ গোছাতে চূড়ান্ত ব্যস্ত তিনি। মঙ্গলবার সরস্বতী পুজোয় এমনই সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়েছে বুনিয়াদপুরের পাঞ্জারিপাড়া এলাকার একটি বেসরকারি কলেজে।
পাঞ্জারিপাড়ায় কেআইটিএম কলেজটি সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায়। সেখানে সরস্বতী পুজোয় এ বছর সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী এবং এলাকার বাসিন্দাদেরই বেশি এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। এলাকারই বাসিন্দা, যুবক জবাইদুর রহমান নিয়মিত নমাজ পড়েন। সেই জবাইদুর পুজোর আগের রাতে পুজোর বাজার করেছেন। পরের দিন সকালে নমাজ পড়েই কলেজে চলে এসেছেন। আম পল্লব, ফুল, বেলপাতা তুলে আনা থেকে যজ্ঞের জন্য কুল গাছের ডালও কুড়িয়ে এনেছেন তিনি। জবাইদুরের কথায়, ‘‘সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাই ঠিক ধর্মপ্রাণের পরিচয়। অন্যের ধর্মকে সম্মান জানালে, নিজের ধর্মের সম্মান বাড়ে। তাই পুজোয় অংশগ্রহণ করতে দ্বিধা হয়নি।’’
একা জবাইদুর নয়, কলেজের আর এক ছাত্রী রুমি আনসারিও সমানতালে পুজোয় হাত লাগিয়েছেন। পুরোহিতের কাছে বসে সাজিয়ে দিয়েছেন নৈবেদ্য। পুজো শেষে প্রসাদও বিতরণ করেছেন মধুমিতা নামের আর এক ছাত্রীর সঙ্গে। সকালবেলাতেই এলাকার একঝাঁক সংখ্যালঘু ছেলেমেয়ে ও কচিকাঁচারা কলেজ ক্যাম্পাসে এসে ভিড় করেছিল। পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করে অঞ্জলিও দিয়েছে তারা। রুমি বলেন, ‘‘ঈশ্বর ও আল্লা একই। এতে বিভেদের কিছু নেই। তাই নিঃসঙ্কোচে পুজোয় অংশ নিয়েছি।’’ পুজো শেষে এক বেঞ্চে বসে খিচুড়ি ভোগও খেয়েছেন এলাকার শতাধিক মুসলিম বাসিন্দা।
কলেজের ডিরেক্টর সুরজিৎ ঘোষ ও অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষ বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক হানাহানি, বিভেদ এখানে নেই। এখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের সক্রিয় উপস্থিতি ও সহযোগিতা আমরা সবসময়ই পাই। সরস্বতী পুজোয় যে ভাবে তাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাতে পুজোর পরিবেশ আরও সুন্দর হয়েছে।’’a