আত্রেয়ী নদীতে নৌকো ভাসাচ্ছে পড়ুয়ারা। শুক্রবার বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
আত্রেয়ীকে বাঁচাতে পথে নামল বালুরঘাটের স্কুল পড়ুয়ারা। নদীর শুকনো চরে ক্রিকেট খেলে, মুকাভিনয় করে এবং আবৃত্তি ও ছড়া বলে অভিনব প্রতিবাদ জানালো তাঁরা। শুকিয়ে যাওয়া নদীর হাঁটু জলে সার বেধে নৌকো ভাসিয়ে আত্রেয়ীর বেহাল অবস্থা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তারা।
শনিবার ‘আত্রেয়ীর জন্য হাঁটুন’ বার্তা তুলে ধরে আত্রেয়ী সত্যগ্রহ মুভমেন্ট নামে নাগরিকদের তৈরি মঞ্চ বালুরঘাট শহরে মৌন মিছিল করবে। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিন দিশারী সংকল্প নামে পরিবেশপ্রেমী সংস্থার উদ্যোগে শহরের পড়ুয়ারা মিছিল করে রঘুনাথপুর ঘাটে গিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আত্রেয়ীকে রক্ষার ডাক দেয়। সংস্থার সম্পাদক তুহিনশুভ্র মন্ডল বলেন, ‘‘আত্রেয়ীর পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি আন্দোলন চলবে।’’ ইতিমধ্যে স্রোতস্বিনী আত্রেয়ীর বেহাল অবস্থায় বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঐতিহ্যবাহী এই নদীকে বাঁচাতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সীমান্তের ওপারে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে জল আটকানোয় বালুরঘাটে আত্রেয়ী শুকোতে বসেছে বলে অভিযোগ ওঠায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বালুরঘাটে নাগরিকরা প্রতিবাদ মিছিল এবং মানবশৃঙ্খল তৈরি করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই আন্দোলনে নেমে পড়েছে পড়ুয়ারাও।
সম্প্রতি নদীর উৎস মুখে আড়াআড়িভাবে কংক্রিটের সেচবাঁধ দিয়ে জলধারা আটকে দেওয়ায় আত্রেয়ী দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। গরমের শুরুতেই আত্রেয়ী জলহীন হয়ে পড়ায় বালুরঘাট শহরে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের মতো কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প রূপায়ণ নিয়েও সমস্যায় পড়েছে। প্রশাসনের তরফেও বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
পড়ুয়াদের মানববন্ধন।—নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই পরিবেশপ্রেমীরা। “আত্রেয়ী সত্যাগ্রহ মুভমেন্ট কমিটি” গড়ে বালুরঘাটে মানববন্ধন করে আন্দোলন শুরু করতে চলেছেন বাসিন্দারা। কমিটির কনভেনার সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘নদী পুজো করে আগামী ২১ এপ্রিল আত্রেয়ী বরাবর মানবশৃঙ্খল গড়ে নদী রক্ষার ডাক দেওয়া হবে।’’
বিগত বছরগুলির চেয়ে এবার আত্রেয়ীর শীর্ণরূপ দেখে শঙ্কিত নদী অববাহিকা অঞ্চলে বসবাসকারী কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। কুমারগঞ্জের সমজিয়া এলাকার চাষিদের অভিযোগ, এই এলাকা থেকে ১৪০০ মিটার দূরে ওপারে নদীর উপর কংক্রীটের সেচবাঁধ ও লকগেট তৈরির ফলে এপারে জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। চৈত্রেই নদী জুড়ে ধুধু বালির চড়। কোথাও সামান্য এলাকায় ডোবার মতো হাঁটু জল নিয়ে আত্রেয়ী কার্যত মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।