সংশয়: স্কুল খুলবে তো? সামনে এক পড়ুয়া। ছবি: সন্দীপ পাল
মাস ছয়েক হল, আমি রায়গঞ্জের একটি বার ও হোটেলে ওয়েটারের কাজ করছি। গত বছর মাধ্যমিক পাশ করার পরে বাড়ির পাশের হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারলাম না। দুই ভাই, বাবা-মাকে নিয়ে আমাদের সংসার। বাবা দিনমজুরি করেন। দাদা আগে থেকেই রায়গঞ্জের হোটেলে রাঁধুনির কাজ করেন।
করোনা আবহে ২০২০ সালে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে সংসারে আর্থিক সঙ্কট শুরু হয়। বাবা ও দাদা সেই থেকে নিয়মিত কাজ পাচ্ছিলেন না। রোজগারের ঠিক নেই। কী ভাবে সংসার চলবে, তখন থেকেই বুঝতে পারছিলাম না আমরা। তবু বাবা অনেক কষ্ট করে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা ধার করে আমাকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে বইখাতা কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা আবহের জেরে স্কুল বন্ধ ছিল। চলতি বছরের শুরুতে কিছু দিন স্কুল খুললেও পরে তার দরজা ফের বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সংসারে আর্থিক অনটনের মধ্যে বাড়িতে বসে থাকাটা আমার কাছে বিলাসিতা মনে হল। মনে হল, রোজগার না করে বাড়িতে বসে থাকার ফলে বাবা ও দাদার উপরে চাপ সৃষ্টি করছি। সে জন্য হতাশাতেও ভুগছিলাম।
তাই পড়াশোনা ছেড়ে রায়গঞ্জে এসে হোটেলে কাজ নিলাম। সেই সময় আমার ১৮ বছর না হওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাকে কাজে নিচ্ছিলেন না। আমার দাদা ওই হোটেলেই রাঁধুনির কাজ করতেন। শেষে দাদার অনুরোধে কর্তৃপক্ষ আমাকে কাজে রাখেন। কাজে যোগ দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই স্কুলে পড়াশোনা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু কাজ ছেড়ে আমার আর স্কুলে ফেরা হল না। কারণ, বাবা ও দাদা এখনও নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না। আমার রোজগারের টাকায় সংসারের বেশির ভাগ খরচ চলে।
স্কুলে যেতে কিন্তু এখনও ইচ্ছে করে। কাজের ফাঁকে সময় পেলে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি। স্কুলের খোঁজখবর নিই। মনটাকে ভাল রাখার চেষ্টা করি।
অনুলিখন: গৌর আচার্য
প্রদ্যোত রায়, কালিয়াগঞ্জ (নাম পরিবর্তিত)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।