অনিয়ম: লকডাউনে জমজমাট বাজার। শুক্রবার, গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়া বাজারে। নিজস্ব চিত্র
রুজি-রোজগার নেই। ঘরে চাল ‘বাড়ন্ত’। এমন অবস্থায় ‘প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা’ অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা পড়তেই ভিড় জমল ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে। আর উধাও হয়ে গেল সামাজিক দূরত্বের সতর্কবাণী। শুক্রবার সকাল থেকে এমনই ছবি ধরা পড়ল মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কোথাও পুলিশ, কোথাও আসরে নামেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের সপ্তাহ গড়িয়েছে। রুজি-রোজগার বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনায় উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্ট নম্বরের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে। তার প্রথম দিনে তিন জেলাতেই দেখা গেল ঠাসাঠাসি করে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তোলার পালা।
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা প্রকল্পে মালদহ জেলায় প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ দিন জেলার ২৩০টি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের শাখা এবং ৫১৮টি ব্যাঙ্ক সহয়তা কেন্দ্র থেকে উপভোক্তাদের টাকা বিলি শুরু হয়েছে। মালদহের মতো দক্ষিণ দিনাজপুরেও প্রায় সাত লক্ষ অ্যাকাউন্ট হোল্ডার রয়েছেন। প্রায় ১৭০টি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের শাখা অফিস থেকে টাকা বিলি শুরু হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরেও প্রায় ১০ লক্ষ প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকতেই এ দিন ভিড় উপচে পড়ে জেলার ব্যাঙ্কগুলিতে। মালদহের কালিয়াচকের একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের সামনে দেখা যায় শতাধিক উপভোক্তা একসঙ্গে ঠাসাঠাসি করে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, হোম কোয়রান্টিন থাকা একাধিক পরিবার থেকেও মানুষ টাকা তুলতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আর তাতেই আরও বিপদের আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। কালিয়াচকের বাসিন্দা নিজামউদ্দিন শেখ বলেন, “ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে পাঁচটি পেট চালাই। লকডাউন হতেই রাজস্থান থেকে বাড়ি ফিরে এসেছি। কাজ না থাকায় হাতে টাকা নেই। পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার সামর্থ নেই। হাতে ৫০০ টাকা পেলে কমপক্ষে ১০ কেজি চাল, ডাল তো কিনতে পারব।” একই সুর শোনা গেল দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা সুধীর সরকারের গলাতেও। তিনি বলেন, “এখন যেন ৫০০ টাকাও অনেক মনে হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে ছুটে আসতে হয়েছে।”
তবে সামাজিক দূরত্ব কি মানা হচ্ছে? উপভোক্তাদের একাংশ বলেন, “বাড়িতে থেকে অনেক সামাজিক দূরত্ব পালন করেছি। পেটে খাবার না থাকলে বাঁচতে পারব না। আর বেঁচে না থাকলে সামাজিক দূরত্ব মানব কী ভাবে।” মালদহের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুশান্তকুমার হালদার বলেন, “উপভোক্তারা যাতে সামাজিক দূরত্ব মানেন তার জন্য আবেদন করা হচ্ছে। পুলিশও আমাদের সহযোগিতা করছে।”