সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন আরজি কর হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসক-পড়ুয়ার বাবা-মা। তাঁরা জানিয়েছেন, নতুন করে নয়, আরও তদন্ত চেয়েই শীর্ষ আদালতে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে এখনও পিটিশন জমা দেওয়া হয়নি। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের দাবি, ওই ঘটনায় আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত। তাঁদের খুঁজে বার করা হোক।
শনিবার নিম্ন আদালতে ৫৭ পাতার একটি বক্তব্য জমা দেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সেখানেও তাঁরা জানান, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার একা এই ঘটনায় যুক্ত নন। আরও কেউ এর নেপথ্যে রয়েছেন। এ বার একই দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। আনন্দবাজার অনলাইনকে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে যাব। পিটিশন এখনও জমা দেওয়া হয়নি। আমরা নতুন করে তদন্ত চাইনি। আরও তদন্ত চেয়েছি।’’ কেন আরও তদন্ত চেয়েছেন, তা-ও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এই ঘটনায় আরও কেউ রয়েছেন। তাঁদের খুঁজে বার করা হোক।’’
এর আগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সরাসরি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তোলেন তাঁরা। নতুন করে তদন্তের আর্জিও জানান। হাই কোর্ট এই মামলায় সিবিআইয়ের অবস্থান জানতে চায়। মামলাকারীর আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাখ্যা জেনে আসার জন্য বলেন বিচারপতি। আগামী ১৫ জানুয়ারি হাই কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
নির্যাতিতার পরিবার দীর্ঘ দিন ধরেই মনে করছে, আরজি করের ঘটনায় ধৃতের পাশাপাশি আরও কেউ জড়িত। নির্যাতিতার আইনজীবী অমর্ত্য দে শনিবার আদালতে বলেছিলেন, ‘‘এই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত রয়েছেন, তা প্রকাশ্যে আসুক। আর কেউ জড়িত কি না, তা-ও উঠে আসুক তদন্তে।’’ এই তদন্তের পাশাপাশি, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের সর্বোচ্চ সাজারও আবেদন জানিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এ বার তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন।
নির্যাতিতার বাবা-মায়ের পাশাপাশি ধৃতের আইনজীবীও শিয়ালদহ কোর্টে সওয়ালে দাবি করেছিলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণে সিসিটিভি ফুটেজের যে অংশ দেখা যাচ্ছে, তাতে এক জনের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না। এর নেপথ্যে অন্য কেউ থাকতে পারেন। ধৃত এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন।’’
যদিও, প্রথমে পুলিশ এবং পরবর্তীতে সিবিআই— দুই সংস্থার তদন্তেই একমাত্র ‘অপরাধী’ হিসাবে উঠে এসেছে ধৃত সিভিকের নাম। সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটেও একমাত্র তাঁকেই ‘দোষী’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে বলা হয়েছে, অন্য কেউ জড়িত কি না, সেই তদন্ত এখনও চালানো হচ্ছে।
আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতনের ঘটনায় এক না একাধিক জন জড়িত, এ নিয়ে সাম্প্রতিকতম রিপোর্টটি দিয়েছে দিল্লির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। বিশেষ ভাবে গঠিত এই দলটি সিবিআইয়ের কাছে যে মতামত পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে— এই অপরাধ এক জনের পক্ষেও ঘটানো সম্ভব। নির্যাতিতার শরীরে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, আরজি করে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা এক জনও ঘটিয়ে থাকতে পারেন। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের সঙ্গে ঘটনার তথ্যপ্রমাণ মিলিয়ে দেখে তবেই এ সম্পর্কে আরও ‘নিশ্চিত’ হওয়া যাবে বলে অভিমত প্রকাশ করে দিল্লির ওই চিকিৎসক দল।