Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: গয়নায় দশভুজাকে সাজান নিরাভরণ বাসন্তী

মাটি লেপা শেষ হলে রং হবে প্রতিমা। তার পর চোখ আঁকা হবে। মহালয়ার পরে বাসন্তী দেবী গয়নায় সাজাতে শুরু করবেন মাটির প্রতিমাকে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৮
Share:

নিমগ্ন: প্রতিমা নির্মাণের কাজে ব্যস্ত বাসন্তী পাল। নিজস্ব চিত্র।

নিজে বরাবরই নিরাভরণ। যখন বয়স অল্প ছিল, তখনও নাকি গয়না পরতেন না। তবে গয়না পরিয়ে দিতে ভালবাসেন। সে গল্প শোনালেন নিজেই। বললেন, “দুর্গাকে অনেক গয়নায় সাজাই। মাথায় টিকলি, গলায় সোনা রঙের মালা। হাতে কত চুড়ি, বালা। সাজানোর একেবারে শেষে নাকে নথ পরিয়ে দিই। আমার গয়নার শখ এটাই।” যে বার তাঁর বাবার মৃত্যু হল, কিছু প্রতিমা অসামাপ্ত থেকে গিয়েছিল। প্রতিমা পুরো গড়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন বাসন্তী পাল-ই। সেই থেকে শুরু। তারপর ত্রিশ বছর কেটে গিয়েছে। সংসার টেনে নিয়ে চলার ব্যস্ততায় বিয়ে করার কথা মনেই আসেননি, দুর্গার মুখে মাটি লেপতে লেপতে হাসেন বাসন্তী। বলেন, “কী করে যেন সময় চলে গেল, আমিও বুড়ি হয়ে গেলাম।” এ বছর দুটো ছোট মূর্তি গড়ছেন। দুটোই বাড়ির পুজোর। কারিগর রাখেননি। সঙ্গে এক বোনকে নিয়ে প্রতিমা গড়েন তিনি।

Advertisement

হাঁটা চলায় কিছুটা জুবুথুবু ভাব এসেছে। তুলি ধরা হাত কেঁপে কেঁপে ওঠে। সে হাতেই কাঠের কাঠামোয় পোয়াল কষে বাঁধেন। শক্ত মাটির তাল ভেঙে জলে নরম করেন। সে হাতেই অসুরের বুকে, হাতে মাটি মাখাতে মাখাতে তাগড়া করেন। বলেন, “প্রতিমা দেখেই যেন সবাই বুঝতে পারে, অসুরের শক্তি আছে। অসুরদের খুব শক্তি হয়।” ছোট থেকে তাঁর বড় হয়ে ওঠার সময়ে নানা রূপে অসুরকে দেখেছেন। বলেন, “বাবা হঠাৎ চলে গেলেন। আমাদের তখন খুব অর্থকষ্ট। তার পর দিদির বিয়ে হল। যখন সব কিছু ঠিকঠাক চলছে, জামাইবাবুও চলে গেলেন। তিনি একটা ঋণ নিয়ে আমাদের জন্য বাড়ি তৈরি করেছিলেন। সেই ঋণ আমরা শুধতে পারলাম না। বাড়িটা অর্ধেক তৈরি হয়েছিল। টাকা না পেয়ে ব্যাঙ্ক বাড়িটা নিলাম করে দিল।”

সেই অর্ধসমাপ্ত বাড়িতেই প্রতিমা তৈরি করছেন বাসন্তী পাল। বললেন, “যাঁরা বাড়িটা কিনেছেন, তাঁরা আশেপাশে পাঁচিল দিয়েছেন। তবু আমাকে প্রতিমা গড়তে দেন।” পুজোয় নতুন শাড়ি কেনেন, ঝুটো গয়না কেনেন। সে সব প্রতিমাকেই পরিয়ে দেন। ছোটবেলায় পাওয়া নিজের একটা চুড়িও নাকি মৃন্ময়ী মূর্তিকে পরিয়ে দিয়েছিলেন। দেবীর কাছে কোনও আশীর্বাদ চান?

Advertisement

মুখ হাসি ছড়িয়ে পড়ে আলোর মতো, একটু ভাবেন। তার পর আবার মাটি লেপতে থাকেন দুর্গার মুখে। মাটি লেপা শেষ হলে রং হবে প্রতিমা। তার পর চোখ আঁকা হবে। মহালয়ার পরে বাসন্তী দেবী গয়নায় সাজাতে শুরু করবেন মাটির প্রতিমাকে। সালংকারা দেবীর কাছে তখনও কি কিছু প্রার্থনা করেন না বাসন্তী পাল? বলিরেখা ধরা মুখের কোণে ফের একচিলতে হাসি এল। বললেন “চাই তো। কিন্তু তখন তো তার মন্ডপে যাওয়ার তাড়া...।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement